সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণ বেড়েছে

প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২২ | আপডেট: ১১:০৫:পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২২

গত নয় মাসে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। বর্তমানে সরকারের ঋণের স্থিতি রয়েছে ১২ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা (এটি মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৬২ শতাংশ) এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৪ লাখ ৭১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা (মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৩৮ শতাংশ)। অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান ‘মধ্যমেয়াদী ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ আরও আধুনিকায়ন করা হবে এবং আঙ্কটাড-এর কারিগরি সহায়তায় অর্থ বিভাগে ‘ডেট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিস সিস্টেম’ নামে একটি কাস্টমাইজ ডাটাবেজ স্থাপন করা হবে। এছাড়া সরকারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঋণ পরিস্থিতি আলোচনা ও বিশ্লেষণ, ঋণ গ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা এবং এ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণে আগামীতে একটি ‘ঋণ সম্মেলন’-এর আয়োজন করা হবে। এটি চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (গত মার্চ) সরকারের মোট ঋণস্থিতি (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর ৩১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে বা ২০২১ সালের জুন শেষে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।  এটি ছিল জিডিপির ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সে হিসাবে নয় মাসের ব্যবধানে সরকারের ঋণস্থিতি বেড়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। তবে টাকার অঙ্কে ঋণ স্থিতি বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে ঋণস্থিতি কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। কারণ এবার নতুন ভিত্তি বছর হিসেবে জিডিপির আকার অনেকখানি বেড়েছে বলে এ ঋণের স্থিতি কমেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনাজনিত কারণে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নীচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ বা ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক (ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপির ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা (এটি মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৬২ শতাংশ) এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি হচ্ছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা (এটি মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৩৮ শতাংশ)। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পুঞ্জিভূত স্থিতি ছিল যথাক্রমে ৭ লাখ ২২ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা এবং চার লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।

 

সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া ঋণের তুলনায় ব্যাংক- বহির্ভূত খাত থেকে সরকার বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা এবং ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেওয়া পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সঞ্চয়পত্র খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম এ খাতে সরকারের ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। একইভাবে অভ্যন্তরীণ আর্থিক বাজারেরও সংস্কার প্রয়োজন। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণস্থিতির মধ্যে পুঞ্জিভূত বহুপাক্ষিক ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা (৬১ শতাংশ) এবং দ্বিপাক্ষিক ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৮৩ হাজার ২০৭ কোটি টাকা (৩৯ শতাংশ)।