আম পেড়ে না দেওয়ায় শ্বাসরোধে হত্যা, এক বছর পর রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই

প্রকাশিত: ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২৫ | আপডেট: ১২:৪৯:অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২৫
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:


 

 

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চাঞ্চল্যকর গৃহকর্মী রিংকন বিশ্বাসের (১২) হত্যারকাণ্ডের উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। ঘটনার সাথে জড়িত দুই আসামী গত শনিবার সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হকের আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন। পরে আসামীদের কারাগারে পাঠানো হয়। আসামীরা হলেন, চিলাউড়া গ্রামের মৃত সাইদুল্লাহর ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৩) ও একই গ্রামের নুরুল হকের ছেলে পাবেল আহমদ তাবেল (২১)।

রবিবার বিকেলে আসামীদের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির বরাদ দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার দিন আসামীরা রিংকনকে আম গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য বলে। কিন্তু সেই আম গাছে বিদ্যুতের তার থাকায় রিংকন গাছে উঠতে রাজি হয়নি। আসামীরা একাধিকবার বললেও রিংকন রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ আসামীরা রিংকনকে ধরে নিয়ে খামারের গোয়ালের পাশে গোবরের ঢিবিতে মুখ ও মাথা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে আসামীরা উক্ত হত্যাকে গাছ থেকে পড়ে গোবরের পানিতে ডুবে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে।

পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত অন্য আসামীদের গ্রপ্তারে পিবিআইয়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

পিবিআই জানায়, ২০২৪ সালের ২২ জুন উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের সমধল গ্রামের আখলাকুর রহমান লুলু লুলু মেম্বারের মাছের খামারে গৃহকর্মী রিংকন বিশ্বাসের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রভাবশালী লুলু মেম্বারের চাপে নিহতের বাবা শ্রিকান্ত বিশ্বাস বাধ্য হয়ে মুখাগ্নি শেষে করে মরদেহ দাফন করেন। কিন্তু ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় এবং একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ঘটনার দুই দিন পর নিহতের বাবা জগন্নাথপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে ২৭ জুন আদালতের নির্দেশে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রওশন আহমদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে সুরতহাল শেষে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। পরে থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভিকটিম রিংকন বিশ্বাস গাছে উঠে আম পারতে গিয়ে পা ফসকে পুকুরে থাকা গোবরের মধ্যে মাথা নিচের দিকে দিয়ে পরে পানিতে ডুবে মারা যায় বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। এদিকে, নিহতের মা বাসন্তি রানীর মনে সন্দেহ থাকায় তিনি আদালতে লুলু মেম্বার সহ ১০ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যা আদালতের আদেশে জগন্নাথপুর থানায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর রুজু করা হয়। কিন্তু তদন্ত শেষে থানা পুলিশ আসামীদেরকে অব্যাহতি দিয়া একই মতামত দিয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। তবে মামলার বাদীর না রাজিতে আদালত গত ২৩ মার্চ সিলেট পিবিআইকে মামলার দায়িত্ব প্রদান করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) তারিকুল ইসলাম তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ওই দুই আসামীকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে। পরে আসামীদেরকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের জন্য রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসামী শিশু রিংকনের মৃত্যু একটি হত্যাকান্ড বলে স্বীকার করে এবং হত্যাকান্ডে আরও জড়িতদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে বলে জানান পিবিআই।

মামলার বাদী নিহতের মা বাসন্তি রানী বলেন, নিজের চোখে সন্তানের গায়ে কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলাম। তখন থেকেই মনকে আর বুঝাতে পারিনি। পুলিশ টাকার বিনিময়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে। তাই আদালতের না রাজি দেই। পিবিআই আমার ছেলের খুনিদের গ্রেপ্তার করেছে; আমি তাদের ফাঁসি চাই।