চার কন্যার জন্ম দেয়ায় স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধুর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ৭:৪৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ | আপডেট: ৭:৪৪:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে চার সন্তানের এক জননী বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। ওই নারীর নাম শিপা বেগম (২৯)।তিনি জগন্নাথপুর পৌরসভার ইকড়ছই এলাকার মৃত মকদ্দুছ মিয়ার মেয়ে ।
অভিযোগ উঠেছে, পরপর চার কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় এবং ধারকৃত টাকা ফেরত চাওয়ায় স্বামীর অত্যাচারে ওই গৃহবুধ আত্মহত্যা করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের বড়কাপন গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
আজ শনিবার এব্যাপারে জগন্নাথপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার ইকড়ছই এলাকার মৃত মকদ্দুছ মিয়ার মেয়ো সঙ্গে উপজেলার বড়কাপন গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়ার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দাম্পত্যজীবন সুখের ছিল। বিয়ের প্রথম বছরেই তাদের প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম কন্যা সন্তানের খবরে তেমন খুশি না হলেও মোটামুটি ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্মের পর। তারপর একটি ছেলের আশায় পর পর আরো দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। একে একে ৪ কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে স্বামী সুমন মিয়া। প্রায়শই স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করতেন।
এরপরও স্বামীর সংসারে সুখে থাকার জন্য বছরখানেক আগে শিপা বেগমের মা মনু বেগম তার সৌদি প্রবাসী মেয়ের কাছ থেকে মেয়ের জামাই সুমন মিয়াকে দুই লাখ টাকা ধার দেন। এতে করে শিপা বেগমের সংসারে সুখের চেয়ে আরও দুঃখের ছায়া নেমে আসে। মাসখানেক আগে ধার দেওয়া ওই টাকা সুমন মিয়ার কাছে ফেরত চাওয়া হলে, শিপা বেগমের ওপর শুরু হয় স্বামীর অমানবিক নির্যাতন। আর সেই নির্যাতন সহিতে না পেরে শুক্রবার বিকেলে বিষ পান করেন চার সন্তানের ওই জননী। পরে পরিবারের লোকজন শিপা বেগমকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন।

শিপা বেগমের মা মনু বেগম বলেন, কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া ছিল আমার মেয়ের অপরাধ। ছেলে সন্তান জন্ম হয় না বলে প্রায়ই আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করত তাঁর স্বামী। মেয়ের সুখে জন্য জামাইকে ব্যবসার কাজে ২ লাখ টাকা ধার দেই। আর সেই টাকা চাওয়াতে আমার মেয়েকে নির্যাতন করত শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তার মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী। আমি তাদের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, শিপা বেগমের মরদেহ সিলেট হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ওই নারীর মা মনু বেগম স্বামী ও ভাসুরের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।