কুলাউড়ায় অন্যাকে ফাঁসাতে পিতার হাতে কন্যা খুন: বিস্কুটের প্যাকেটের সূত্রধরে প্রধান আসামী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২২ | আপডেট: ১২:৫৮:পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২২

গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার সময় কুলাউড়া থানাধীন পৃথিমপাশা ইউপির অন্তর্গত সুলতানপুর সাকিনস্থ জনৈক কামাল মাস্টারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া দিগিন্দ নম (৩৫), পিতা-পিরিন্দ্র সরকার, সাং-গুমগুমিয়া, থানা-নবীগঞ্জ, জেলা-হবিগঞ্জ এর প্রতিবন্ধী মেয়ে পপি সরকার (১২) এর মৃতদেহ দিগিন্দ নম এর ভাড়াটিয়া বসত ঘরের দক্ষিণ পার্শ্বে গাছ বাগানে গলায় ওড়না দিয়ে গিট দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তি সাপেক্ষে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃত পপি সরকার (১২) এর মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে মৃত পপি সরকারের পিতা নিজেই বাদী হয়ে একই গ্রামের প্রতিবেশী সুরমান মিয়া ও কাজল মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ হারুনুর রশিদসহ কুলাউড়া থানার একটি চৌকস টিম মামলার রহস্য উদঘাটনে মাঠে কাজ শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে মৃত পপি সরকারের বসত ঘরের দক্ষিণ পার্শ্বে জানালার সামনে বারান্দায় ঝুলানো ‘মঞ্জিল মায়া সল্ট’ নামক একটি বিস্কুটের প্যাকেট উদ্ধার করে তদন্তকারী দল।

 

 

উক্ত বিস্কুট প্যাকেটের সূত্র ধরে তদন্তকারী দল সরেজমিনে অনুসন্ধানে পার্শ্ববর্তী একটি মুদি দোকানে হুবুহু কয়েকটি বিস্কুটের প্যাকেট উদ্ধার করে। মুদি দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান যে, ঘটনার আগের দিন মৃত পপি সরকারের পিতা দিগিন্দ নম তার মুদি দোকান হতে উদ্ধার করা ১০ টাকা মূল্যের একটি মঞ্জিল মায়া সল্ট বিস্কুটসহ ১০ টাকার মিনিট কার্ড ও কয়েকটি সিগারেট ক্রয় করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলার ঘটনায় বাদী দিগিন্দ নম জড়িত মর্মে জোর সন্দেহ হইলে দিগিন্দ নমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার পার্শ্ববর্তী মুদি দোকান থেকে বিস্কুট ক্রয় করার কথা স্বীকার করে। দিগিন্দ নম তার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে উক্ত বিস্কুটের প্যাকেট তার মেয়ের বসত ঘরের দক্ষিণ পার্শ্বে জানালার সামনে বারান্দায় ঝুলাইয়া রেখে মেয়েকে বিস্কুট খাওয়ানোর প্রলোভন দেখানোর নাটক সাজায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা দিগিন্দ নমকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নিবিড় ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে জানায় যে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ রাত আনুমানিক ০৪ টায় সময় তার মেয়ে পপি সরকার মৃগী রোগে আক্রান্ত হলে সে নিজেই তার মেয়ের গলায় ওড়না পেচাইয়া শ্বাসসরোধ করে হত্যা করে লাশ তার বসত ঘরের দক্ষিণ পার্শ্বে গাছ বাগানের নীচে ফেলে আসে। ঘটনার সংঘঠনের পর দিগিন্দ নম পুনরায় তাহার রুমে এসে শুয়ে থাকে। হত্যার ঘটনা সাজিয়ে পরের দিন সকালে তার মেয়ে পপি সরকারের লাশ গাছ বাগানে পাওয়া গেছে বলে দিগিন্দ নম নিজেই বাড়ীর মালিক কামাল মাস্টার, স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আশপাশের লোকজনদের জানায়। পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিবেশী সুরমান মিয়া ও কাজল আলীকে হত্যার দায়ে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে দিগিন্দ নম তার মেয়ে পপি সরকারকে নিজেই গলায় ওড়না পেছাইয়া শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। মামলার বাদী দিগিন্দ নম গত ০১ অক্টোব তার মেয়ে পপি সরকারকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেছে। বিজ্ঞ আদালত তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি গ্রহণ শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।