সিলেটের ট্রেনযাত্রীদের ৮দফা বাস্তবায়নের দাবিতে জুলাই যোদ্ধা রানা অনশন ভাঙ্গালেন জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন

বৃহত্তর সিলেটের ট্রেন যাত্রীদের ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষে টানা ৪ ঘন্টা অনশন করেন শেখ বদরুল ইসলাম রানা নামের এক জুলাই যোদ্ধা। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল দশটায় কুলাউড়া জংশন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তিনি অনশন শুরু করেন। পরে অনশনরত ওই জুলাই যোদ্ধার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ৮দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন কুলাউড়ার নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর দুইটার দিকে খবর পেয়ে কুলাউড়া জংশন স্টেশনে যান মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন। এসময় জেলা প্রশাসক অনশনকারী জুলাই যোদ্ধা বদরুল হোসেন রানার দাবির বিষয়গুলো শোনার পাশাপাশি আন্দোলনরত অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। পরে তিনি দাবি দাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ক্রমান্বয়ে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অনশন তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। এসময় অনশনকারী জুলাই যোদ্ধা রানাকে জুস ও পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন। এসময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, কুলাউড়া থানার ওসি মো. ওমর ফারুক, ৮দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক আজিজুল ইসলাম, আতিকুর রহমান আখই,মোঃ খালেদ পারভেজ বখ্শ, আলমাছ পারভেজ তালুকদার, আব্দুল কাইয়ুম মিন্টু, নাজমুল বারী সোহেল, মাহফুজ শাকিল, সৈয়দ আশফাক তানভীর, মহিউদ্দিন রিপন, এইচ ডি রুবেল, সাইফুর রহমান প্রমুখ।
অনশনকারী ওই জুলাই যোদ্ধা বদরুল হোসেন রানা কুলাউড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাদে মনুসর এলাকার বাসিন্দা শেখ শহীদুল ইসলামের ছেলে। রানা কুলাউড়া সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শুধু বদরুল ইসলাম রানা নয়, সম্প্রতি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভোগান্তি নিরসনসহ সিলেটের ট্রেন যাত্রীদের ৮ দফা দাবিসহ বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য মাঠে নামেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন।
৮ দফা দাবিগুলো হলো, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু, সিলেট-আখাউড়া রেলপথ সংস্কার করে ডুয়েল গেজে উন্নীত করা, সিলেট-আখাউড়া লোকাল ট্রেন চালু, সিলেট অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনগুলো চালু, কুলাউড়া স্টেশনে টিকিট বরাদ্দ বাড়ানো ও কালোবাজারি বন্ধসহ সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর কালনী ও পারাবত এক্সপ্রসের আজমপুর স্টেশনের পর ঢাকা অভিমুখী সকল স্টেশনে যাত্রা বিরতি বন্ধ, সিলেটের সাথে চলাচলকারী ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন যুক্ত করা এবং যাত্রীদের চাহিদা অনুপাতে প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, সিলেটের ট্রেন যাত্রীদের ৮ টি দাবীই যৌক্তিক। পর্যটন শিল্পের বিকাশে রেলপথ ও সড়কপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সিলেট অঞ্চলে। সিলেটের রেলপথ ও সড়কপথের উন্নয়নের জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। তিনি আরো বলেন, জুলাই যোদ্ধা রানা যে ৮টি দাবি জানিয়েছেন, এই দাবিগুলো শুধু তার একার নয়, এটা সমগ্র সিলেটবাসীর দাবি।
৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক আজিজুল ইসলাম ও আতিকুর রহমান আখই জানান, ৮দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সিলেট অঞ্চলে গত আগস্ট মাসে শুরু হয় আন্দোলন। আট দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন পরিষদ কুলাউড়ার উদ্যোগে প্রথম আন্দোলন শুরু হলেও পরবর্তীতে গোটা সিলেট জুড়ে এই আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করে। ধারাবাহিকভাবে সিলেটের বিভিন্ন স্টেশনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া জংশন স্টেশনে দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি চলাকালে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় আধা ঘন্টা আটকে রাখে আন্দোলনকারীরা। সেসময় রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ আন্দোলনকারীদের প্রতিশ্রুতি দেন ১৫ দিনের মধ্যে কুলাউড়ায় আন্দোলনকারীদের সাথে বসে বিষয়টির সমাধান করবেন। তার এই প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা সেদিন ধর্মঘট কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ট্রেন ছেড়ে দেন। সেই মোতাবেক রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ১০ অক্টোবর শুক্রবার কুলাউড়া জংশন স্টেশনে আন্দোলনকারীদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক মিলিত হয়। বৈঠকে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে রেলওয়ের পক্ষ থেকে যে আশ্বাস প্রদান করা হয় তা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। উল্টো রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা আগামী ০১ নভেম্বর শনিবার সিলেট বিভাগ জুড়ে সিলেট-শায়েস্তাগঞ্জ রেলপথ অবরোধের ডাক দেন। সিলেটবাসীকে এদিন ট্রেন ভ্রমন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।