সাত বছরেও শেষ হয়নি ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ, বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জে জগন্নাথপুরে সাত বছরেও শেষ হয়নি ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরসভার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের কাজ। এতে নাগরিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রকল্পের কাজ বর্তমানে ধীরগতিতে চলছে। কবে এর সুফল মিলবে তার সদুত্তর জানা নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
স্থানীয় নাগরিকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মাটির নিচ থেকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অকেজো পড়ে পড়ছে টিউবওয়েলগুলো। অর্থ কোটি টাকার পানি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যদি সম্পন্ন করা যেত তাহলে পানির এই তীব্র সংকট কেটে যেত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর সারাদেশের ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের জন্য একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকে অনুমোদন করা হয়। এ প্রকল্পে জগন্নাথপুর পৌরসভার পানি নিস্কাশন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলে। জগন্নাথপুর পৌরসভা ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, জগন্নাথপুর পৌরসভার জন্য একটি গ্রাউন্ড ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ওভার হেড ট্যাংক, একটি সলিড ওয়েস্ট কম্পোসিং সিস্টেম, ২৬ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহের মধ্যে ২৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়। ৯৫টি গভীর নলকপ স্থাপন করার কথা থাকলেও আর হয়নি। ৮ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেনের কাজ বাস্তবায়ন হয়। ১৫ কমিউনিটি ল্যাট্রিনের মধ্যে ৫টা হয়েছে ১০টির কাজ হয় নি। ৬টি পাবলিক টয়লেট হয়েছে। ৩৬টি ডাস্টবিন হওয়ার কথা থাকলেও হয় নি। একটি পানি সরবরাহ অফিস হয়েছে ও দুটি তিন টন ওজনের ট্রাক বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো মিলেনি। শুরুতে ভূমি জটিলতায় প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হলেও ২০২০ সালে পৌরসভার হবিবপুর এলাকায় ৪.৪৩ একর ভূমি সরকার থেকে বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গত ৫ বছরে প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত অনেক কাজ হয়নি। এরমধ্যে সলিড ওয়েস্ট কম্পোসিং সিস্টেম ভূমি জটিলতায় বাতিল হয়ে যায়।
পৌরশহরের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, জগন্নাথপুর পৌরসভায় এই মৌসুমে মাটির নিচ থেকে পানির স্তর সরে যাওয়া। যেকারণে শত শত টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে। তখন বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষের মধ্যে হাহাহার দেখা দেয়। পানি সরবরাহের প্রকল্পটি চালু হলেই এ সংকট কেটে যেত। প্রায় দুই বছর আগে প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জগন্নাথপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল ও ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র সফিকুল হক জানান, আমরা দায়িত্বকালীন সময়ে এ প্রকল্পের পুরোপুরি কাজ শেষ করে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে চেষ্টা করেছি। আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় কাজ শেষ হয় নি, কবে এর সুফল মিলবে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে একটি ড্রেনের কাজ অসমাপ্ত রেখে ঠিকাদার চলে গেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক অধিকার পরিষদের আহবায়ক এম এ কাদির বলেন, ৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব হতো। পৌর নাগরিকরা বিশুদ্ধ পানি ও ড্রেনেজ সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ৭ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক। তিনি বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় উন্নয়ন কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রকৌশলী সতীশ গোস্বামী জানান, প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও গত এক বছর ধরে অসমাপ্ত কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। তিনি বলেন, প্রকল্পের পুরোকাজ শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে।
জগন্নাথপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, এ প্রকল্পের অনেক কাজ এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আমরা চেষ্টা করছি ।

