মৌলভীবাজারে নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিতঃ ২ লাখ মানুষ পানি বন্দি। ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশংকা

প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২৪ | আপডেট: ৮:১০:অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২৪

 

স্টাফরিপোর্টার:

পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে কমলগঞ্জের ধলাই ও মনু নদীর পানি।
গত তিন দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের নদ-নদীতে পানি বেড়ে জেলার চার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলার হাওর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে পানি বন্দি হয়েছেন প্রায় ২ লাখ মানুষ। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি রেলওয়ে ব্রীজ পয়েন্টে ২৩ সে.মি, সদরে মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সে.মি এবং কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ১২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে টানা বর্ষণে হাওড়ের পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম এবং হাওড়ের পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্জলের কয়েকশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যা কবলিত এলাকার উঁচু স্থানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। টানা বর্ষণ ও ধলাই নদীর পুরনো ভাঙা বাধ দিয়ে ও পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত তিন দিনের অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার হাওরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পুরনো ভাঙা বাধ দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। এতে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের রাস্তাঘাট ও ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বড়লেখায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, জেলার সবকটি নদীতে উজানে বৃষ্টি হওয়ায় নদীগুলো পানিতে টুইটুম্বর। বাড়ছে মনু, ধলাই, কুশিয়ারা, জুড়ি, কন্টিনালা ও ফানাই নদীর পানি। সব কটি নদী বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘ক্রমাগত বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে বড়লেখা উপজেলার চারটি, জুড়ি উপজেলার তিনটি, কুলাউড়া উপজেলার ছয়টি, সদর উপজেলার চারটি এবং রাজনগর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান পানি বৃদ্ধির ফলে উল্লিখিত উপজেলাসমূহে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরইমধ্যে জুড়ি, বড়লেখা এবং কুলাউড়া উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ভুক্তভোগী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।’

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে মৌলভীবাজার শহরতলীর কিছু অংশ, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবুজবাগ, লাল বাগ, রুপসপুর, সুরভীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে ও অনেকের বাড়িতে পানি উঠায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

মৌলভীবাজার সব ইউএনওদের সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা এবং আশ্রয়কেন্দ্র সমূহে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ খাবার ও পানির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

এদিকে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনের শঙ্কা। আতঙ্কে রয়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। মনু, ধলাই, কশিয়ারা, জুড়ি, কন্টিনালা, ফানাইসহ নদীর অর্ধশতাধিক পয়েন্ট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া, হাওরের পানিতে বড়লেখা উপজেলার ৪টি, জুড়ি উপজেলার ৩টি, কুলাউড়া উপজেলার ৬টি, সদর উপজেলার ৪টি এবং রাজনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানি বন্দি হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্স,উপজেলা পরিষদসহ পৌরসভার অনেক এলাকা বন্যা নিমজিত। কুলাউড়া ও বরমচাল রেললাইন এর মাঝে উঠায় যে কোন সময় রেল যোগাযোগ বিছিন্ন হতে পারে।