ভাটেরা রেলস্টেশনসহ সকল বন্ধ রেলস্টেশন চালু এবং বৃহত্তর সিলেটবাসীর প্রাণের ৮ দফা দাবী বাস্তবায়নের দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ভাটেরা রেলস্টেশনসহ সকল বন্ধ রেলস্টেশন চালু এবং বৃহত্তর সিলেটবাসীর প্রাণের ৮ দফা দাবী বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভাটেরা রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে ভাটেরার সর্বস্তরের জনসাধারণ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধন থেকে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে ভাটেরার নেতৃবৃন্দরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে কুলাউড়ায় বেশ কয়েকটি রেলস্টেশন বন্ধ রয়েছে। তন্মধ্যে ভাটেরা রেলস্টেশন অন্যতম। এলাকার জনদূর্ভোগ লাগবে ভাটেরা স্টেশন অচিরেই চালু করতে হবে। আমাদের এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবি মানতে হবে-স্টেশন চালু করতে হবে। এসময় বক্তারা সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালুসহ আট দফা দাবি না মানলে রেলপথ অবরোধ ও ট্রেন আটকে সিলেটের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারী দেন।
ভাটেরা স্টেশন বাজার বণিক সমিতির সভাপতি শেখ আকমল হোসেন তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সংবাদকর্মী শেখ সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকীর পরিচালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ৮ দফা দাবিতে বক্তব্য রাখেন বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক মোঃ আজিজুল ইসলাম, যুগ্ম সমন্বয়ক ও কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান আখই, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল জলিল জামাল, বিএনপি নেতা সারোয়ার আলম বেলাল, ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ সাইদুল ইসলাম পাখি, ভাটেরা বিএনপির সভাপতি শেখ আজাদ সিদ্দিকী, সাইফুল তাহমিনা ফাজিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহ সাইফুর রহমান, ভাটেরা ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শাহ আব্দুল লতিফ, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমাছ পারভেজ তালুকদার, সাংবাদিক নাজমুল বারী সোহেল, মাহফুজ শাকিল, মহিউদ্দিন রিপন ও এইচ ডি রুবেল, বিএনপি নেতা সিপার আহমদ, ভাটেরা ফুটবল একাদশের সভাপতি সৈয়দ হৃদয় আহমদ সদর, ভাটেরা ইউনিয়ন এর নিকাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রার কাজী সামাদ আজাদ, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ফারহান মুবিন তালুকদার, ভাটেরা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মনির তালুকদার, ভাটেরা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জুয়েল আহমদ, ইউনাইটেড ক্লাবের সভাপতি তাজুল ইসলাম, ভাটেরা ইউনিয়ন তালামীযের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদ, উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাহিত্য সম্পাদক শাহ রাহিব, ভাটেরা স্টেশন বাজারের ব্যবসায়ী শাহ হাফিজ অলিদ আহমেদ, মারুফ খান স্বপন, আহমেদ সুহেল, ভাটেরা কিন্ডার গার্টেন এন্ড জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মাধব চক্রবর্তী, ছাত্রদল নেতা শাহ সাজু, ক্রীড়া সংগঠক শাব্বির আহমদ সাগর তালুকদার, সংবাদকর্মী অমিত মল্লিক প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিলেট বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে রেল যোগাযোগে বৈষম্যের শিকার। ব্রিটিশ আমলে রেল যোগাযোগ গড়ে উঠলেও বর্তমানে এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন ও বগির অবস্থা খুবই নাজুক। পথে পথে প্রায়ই ইঞ্জিন নষ্ট হয়, বেশ কিছু স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ৮ দফা দাবি সিলেটবাসীর ন্যায্য দাবি, ইতোমধ্যে সিলেট জুড়ে এই আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতম হবে। আট দফা দাবি হলো, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালু, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের রেলপথ সংস্কার করে ডুয়েলগেজে উন্নীত করা, সিলেট-আখাউড়া লোকাল ট্রেন চালু, সিলেট অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনগুলো চালু, কুলাউড়া স্টেশনে টিকিট বরাদ্দ বাড়ানো, সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর কালনী ও পারাবত এক্সপ্রসের আজমপুর স্টেশন-পরবর্তী যাত্রা বিরতি বন্ধ, সব ট্রেনে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন, যাত্রী অনুপাতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন।
উল্লেখ্য, সিলেটবাসীর প্রতি রেলওয়ের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে এবং আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গত ৩০ আগস্ট কুলাউড়া জংশন স্টেশনের প্লাটফর্মে প্রতিবাদ সমাবেশ করে আট দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন কুলাউড়া। এর আগে একই দাবিতে গত ৯ আগস্ট কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন, ১১ আগস্ট রেল উপদেষ্টা, রেলসচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এরপর ১৬ আগস্ট সিলেট রেলস্টেশনে মানববন্ধন ও ২৩ আগস্ট শ্রীমঙ্গল স্টেশনে মানববন্ধন কর্মসূচি করা হয়। আন্দোলনকারীরা আরও এক মাসের সময় বেঁধে দিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাপক জন সমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচারপত্র বিলি এবং সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনে রেলযাত্রীদের সাথে মতবিনিময়। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময়। ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে এক বিশাল গণ অনশন কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া অক্টোবর মাসের শুরুতে ৮ দফা দাবি আদায় না হলে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।