রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ

প্রকাশিত: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২২ | আপডেট: ১১:৪৬:পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২২
ডেস্ক রিপোটঃ

হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালী তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান পেল যে মাসে, তার নাম মার্চ। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ।

‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে…।’ ‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’

উনিশ শ’ একাত্তর সালের এই মাসে তীব্র আন্দোলনের পরিণতিতে শুরু হয় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই।

কয়েক শতাব্দীর ঔপবিনেশিক দুঃশাসনেরকয়েক শতাব্দীর ঔপবিনেশিক দুঃশাসনের পাথার পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে ‘পাকিস্তান’ নামে বাঙালীর ভাগ্যে যা জুটেছে, তা ভিন্নরূপে আরেক অপশাসন, নির্যাতন আর বঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। বাঙালী জাতি ওই শোষণ-বঞ্চণার হাত থেকে মুক্তি পেতে নেমে পড়ে রাজপথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সীমাহীন দেশপ্রেম, তুলনাহীন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অসীম সাহস, দূরদর্শিতা আর দৃঢ় নেতৃত্বে এই পলল ভূখ- একাত্তরের মার্চে এসে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
বছর ঘুরে বাঙালীর জীবনে আবার এসেছে অগ্নিঝরা মার্চ। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাপ্নিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দু’বছর ধরে পালিত হচ্ছে মুজিববর্ষ। গত বছরের ২৫ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বছরজুড়েই পালিত হয়েছে জমকালো নানা কর্মসূচী। তাই এবারের অগ্নিঝরা মার্চ মাস বিশেষ তাৎপর্য বয়ে এনেছে পুরো জাতির জীবনে।
জাতির জীবনে।

১ মার্চ, ১৯৭১। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এ দিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে রাজপথে। ততক্ষণে হাজারও মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো সেøাগান দেয়, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কর্মসূচী ঘোষণার দাবি জানায়। বিক্ষোভ-সেøাগানে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশ। আর কোন আলোচনা নয়, এবার পাক হানাদারদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি ক্রমশ বেগবান হতে থাকে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাইরে চলছে বিক্ষুব্ধ বাঙালীর কঠোর কর্মসূচী দাবিতে মুহুর্মুহু সেøাগান। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন।