সুনামগঞ্জে ভেসে গেছে দুই হাজার কোটি টাকার মাছ

প্রকাশিত: ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২২ | আপডেট: ৯:২৭:পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২২

 

মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান :

সর্বনাশা বন্যায় ভেসে গেছে সুনামগঞ্জের সাড়ে ১৬ হাজার মৎস্য চাষীর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মাছ। দুদফা বন্যায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন মৎস্য চাষীরা এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।

জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানাগেছে, জেলায় ২৫ হাজার পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০টি পুকুর, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে ১৬৩টি পুকুর। বাকি গুলো বেসরকারি পুকুর। এসব পুকুরে বিক্রয় যোগ্য মাছ ছিল ৩০ হাজার মেট্রিকটন। যার মূল্য দাড়িয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, এ জেলার ১১টি উপজেলার মৎস্যচাষীদের ১০ পোনা মাছ এবং ৪ মেট্রিকটন মা মাছ (ব্রæড) মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গোজাউড়া মৎস্য খামারের মালিক মাহবুব আশরাফ তপু জানান, ২৫ একর জমিতে তিনি ১৪টি পুকুর তৈরী করে মাছ চাষ করে অসছিলেন। দুদফা বন্যায় তার ২ লাখ রেনু পোনা ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির বিক্রয় যোগ্য মাছ ছিল। বাজার দর অনুযায়ি সব মিলিয়ে তার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তপু অরো জানান, তিনি ব্যাংক থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সর্বনাশা বন্যায় তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তিনি দাবি করেন তাকে সহজ শর্তে পুনরায় ব্যাংক ঋণ দেয়া হলে ঘুরে দাড়াতে পারবেন।

ছাতক উপজেলার তাসিন-তানিশা ফিশারিজ গ্রæপের মালিক জয়নাল আবেদীন জানান, ২০ একর জমিতে তিনি ৬টি পুকুর তৈরী রুই, মৃগেল, কাতলা, ঘাসকার্প ও পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির চাষ করেছেন। তার খামারে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। দুদফা বন্যা তার প্রায় সোয়া কোটি টাকা মাছ ভেসে গেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার মাছচাষাী তাজ উদ্দিন জানান, তিনি ৮টি পুকুরে মাছ চাষ করেছেন। এরমধ্যে তিনি রেণু পোনা উৎপাদন করেন। তার খামারের নাম শাহিন এন্ড রুহান ফিশারিজ। তার ফিশারিতে ৪০ লাখ রেণু পোনা ছিল। যেগুলো বিক্রি করলে বাজার দর অনুয়ারি অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা হতো।

দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরা গ্রামের মৎস্য চাষী আব্দুর রহিম জানান, ৩৫ একর জমিতে ১৩টি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। এরমধ্যে ৪টি পুকুর তিনি বছরে এক লাখ টাকা করে লিজ নিয়েছেন। দুদফা বন্যায় তার কোটি টাকা উপরে ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি অরো জানান, সীড কেম্পানীর কাছে তিনি ঋণ করে মাছের খাদ্য নিয়েছে ৩৭ লাখ টাকার এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। বন্যায় সব হারিয়ে এখন তিনি চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। তিনি ব্যবসা পুনরায় দাড় করানো জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন।

জামালগঞ্জ উপজেলার মা ফিশারিজের মালিক ফজলুর রহমান জানান, ৫টি পুকুরে তিনি মাছ মাষ করেছিলেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার পাঙ্গাস মাছ, ২ লাখ ২০ হাজার পাবদা মাছ ও এক লাখ গোলশা মাছ ছিল। এক মাস পার পাবদা মাছ বিক্রি করতে পারতেন। যা অন্তত পক্ষে ২৫ লাখ টাকা আয় হতো। সব মিলিয়ে বন্যায় তার ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান, জেলার ১১টি উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ২৫ হাজার পুকুর রয়েছে। এতে ৩০ মেট্রিকটন বিক্রয় যোগ্য ও ৪ লাখ মা মাছ (ব্রæড) এবং ১০ কোটি পোনা বন্যায় ভেসে গেছে। এছাড়াও পুকুরের অবকাঠামোগত অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ব্রæড মাছ প্রতিমেট্রিকটন ৪ লাখ টাকা ও ৩০ হাজার মেট্রিকটন বিক্রয় যোগ্য মাছে মূল্য দেড় হাজার কোটি টাকা এবং অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডে নিরর্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. জহুরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে ৭ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে জেলার ছাতক উপজেলা সদরে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘন্টায় ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ছাতকে একশত মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১২১ মিলিমিটার।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুন সুনামগঞ্জ শহরের সব বাসাবাড়িসহ শহরের শতভাগ বন্যার পানিতে নিমুজ্জিত ছিল। গত ১৫দিনে মূল শহর থেকে বন্যার পানি নামলেও শহরতলীর বাসাবাড়িতে এখন বন্যার পানি টইটুম্বুর করছে। এছাড়াও হাওর এলাকায় বন্যা লেগেই রয়েছে।