তিন প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক:প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন

প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২২ | আপডেট: ৭:৩১:অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২২

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জেরের প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল বারী প্রতি বছর হলিডে (আগস্ট-থেকে সেপ্টেম্বর মাসে) জন্মভূমি বাংলাদেশে আসেন। এবার ১৭ আগস্ট দেশে আসার জন্য টিকেট কেটেছিলেন। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় একই পরিবারের তিন যুক্তরাজ্য প্রবাসীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের চাপে তিনি দেশে আসার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। শুধু আব্দুল বারী নয় তাঁর মতো আরো অনেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী এবার হলিডে তে দেশে আসছেন না। ইতিমধ্যে তাঁরা দেশে আসার সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আব্দুল বারী দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর কে বলেন, উন্নত জীবন জীবিকার প্রয়োজনে প্রবাসী হলেও জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার টানে প্রতি বছর হলিডে তে ছুটি পেলেই দেশে আসি। ওসমানীনগর উপজেলার তিন প্রবাসীর রহস্যময় মৃত্যুর খবর শুনে স্ত্রী ও সন্তানরা আমাকে দেশে আসতে বারন করছে। বাধ্য হয়েই টিকেট বাতিল করেছি।

উপজেলার ঘোষগাঁও গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মফিজ আলী বলেন, এবার হলিডে তে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসার ইচ্ছে ছিল। সাম্প্রতিক ঘটনায় সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়েছে। ছুটি কাটাতে ফ্রান্স যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসী হত্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় প্রবাসীদের জড়ানোর ঘটনায় প্রবাসীরা দেশে আসা এমনিতে কমিয়ে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিককালে ওসমানীনগর উপজেলায় একই পরিবারের তিন প্রবাসীর রহস্যজনক মৃত্যু এ আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও গত দুই যুগে জগন্নাথপুরের দুই প্রবাসী হত্যাসহ সিলেটের ছয় প্রবাসী হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় প্রবাসীদের মধ্যে দেশে ফেরার প্রতি টান কমছে বলে জানান প্রবাসীরা। সাম্প্রতিক কালে ওসমানীনগর উপজেলায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক প্রবাসী দেশে আসার প্রস্তুতি নিয়ে ফ্লাইট বাতিল করেছেন।

 

প্রবাসীরা জানান, সম্প্রতি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার একই পরিবারের ৫ সদস্য দেশে আসেন। তাদের কে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বাবা ও ছেলে মেয়ের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। এছাড়াও ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই দেশে বেড়াতে এসে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারী জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের রেহানা বেগম খুন হন এবং ১৯৯৬ সালের ৯ মে যুক্তরাজ্য প্রবাসী জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের ছুরত মিয়া কে ঢাকা বিমানবন্দরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালে সিলেটের মুগল কোরেশি ও ২০১১ সালে বিশ্বনাথের তাহির আলী খুনের ঘটনায় বিচার না হওয়ায় প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি এম এ কাদির বলেন, প্রবাসী হত্যা হয়রানি সহ দেশের নীতিবাচক নানা খবর শুনে আমাদের ছেলে মেয়েরা বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম দেশে আসতে চায় না। মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধরা সব প্রতিকূলতায় এখনো দেশের প্রতি টান রয়েছে।

যুক্তরাজ্যর বাংলা মিরর পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা হলিডে উপলক্ষে দেশে যান। ওসমানী নগর উপজেলায় এক পরিবারের তিন প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। আমার জানামতে অনেক প্রবাসী দেশে আসার টিকেট কেটে ও বাতিল করেছেন।
সুনামগঞ্জের সন্তান যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক আ স ম মাসুম বলেন, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় এক পরিবারের তিন প্রবাসীর মৃত্যুর পর সিলেটের প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। এছাড়াও গত ২৫ বছরে ছয় প্রবাসী হত্যার বিচার না হওয়ায় দেশে আসা কমিয়ে দিচ্ছেন প্রবাসীরা।

জগন্নাথপুর উপজেলার শাহারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ রহমান বলেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নতুন প্রজন্ম দেশে আসতে চায় না তাই অনেক প্রবাসী দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে যুক্তরাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার করতে দেখা গেছে।

জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রবাসীদের কোন ঘটনা শুনলে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখি। প্রবাসীরা দেশে এসে কোন হয়রানি শিকার যাতে না হন আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকে। আমি এ থানায় দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কোন প্রবাসী হয়রানির ঘটনা ঘটে নি।