জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন এখনো জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আট দলীয় জোটের প্রার্থী চুড়ান্ত হয়নি। এ জোট থেকে কে হচ্ছেন প্রার্থী এ নিয়ে শেষ মুহুর্তের লড়াই চলছে। রোববার এ জোটে এলডিপি ও এনসিপি নামে আরো দুটি রাজনৈতিক দলযুক্ত হয়েছে। এবিপার্টি সহ আরো কয়েকটি দলযুক্ত হতে আলোচনা চলছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ইতিমধ্যে এ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ কে তাদের চুড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। এ আসনে আট দলীয় জোটের মনোনয়ন দাবিদার জোটের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইয়াসিন খান হলেও জোটের অন্যতম শরিকদল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হকের সমর্থনে দলের নায়েবে আমীর সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনুর পাশা চৌধুরী শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে অবতীর্ণ হন। তাদের দুজনের মধ্যে যখন এ জোটের মনোনয়ন নিয়ে লড়াই চলছে ঠিক তখনি এবি পার্টিতে যোগদান করেন আরেক আলোচিত প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলম। এবি পার্টিও শেষ মুহূর্তে এ জোটে যাচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। চুড়ান্ত মনোনয়নের এ তালিকায় এখন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনুর পাশা চৌধুরী, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামির প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইয়াসিন খান ও এবিপার্টির সৈয়দ তালহা আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। যদিও এ আসনে খেলাফত মজলিসের আরেক প্রার্থী জোটের মনোনয়ন দাবিদার মুশতাক আহমেদ শনিবার নিজ দলের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এ জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে,আট দলীয় জোটের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামি তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে জামায়েতের মজলিশে শুরা’র সদস্য, সিলেট মহানগরের পেশাজীবী থানা আমীর সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ইয়াসীন খান কে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনী এলাকার জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জে মাঠ চষে বেড়ান। একজন সৎ সজ্জন প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি নিজের ক্লিন ইমেজ গড়ে তুলে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা সমাবেশ ও এজেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ভাবে জামায়াত ইসলামি খেলাফত মজলিসসহ সমমনা ইসলামি দল নিয়ে আট দলীয় জোট গঠন করে। এ জোটে অন্যতম নীতিনির্ধারণীতে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক রয়েছেন। ফলে এ আসনে তাঁর দলের নায়েবে আমীর সাবেক এমপি শাহীনুুর পাশা চৌধুরী আট দলীয় জোটের প্রার্থী তালিকায় মুল আলোচনায় চলে আসেন। জামায়াত নেতাদের দাবি শাহীনুর পাশা চৌধুরী ফ্যাসিস আওয়ামী লীগের ধুসর এবং নানা কারণে বির্তকিত।তাকে আট দলীয় জোটের প্রার্থী করা হলে ভোটের মাঠে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন কঠিন হবে। অপরদিকে খেলাফত মজলিস নেতাদের দাবি শাহীনুুর পাশা চৌধুরী একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদ। নির্বাচন মাঠে তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে তিনি তৃনমুল বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন। জনগন এসব জানে এবং বুঝে। ভোটের মাঠে এসবের কোন প্রভাব পড়বে না। মাওলানা শাহীনুর পাশা একসময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুনামগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে জমিয়তের প্রার্থী হয়ে চারবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন। ২০০৫ সালে এ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কিছু দিন সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে (সোনালী আাঁশ প্রতীক) নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারান। এরআগে ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করাসহ শৃঙ্খলাবিরোধী অবস্থানের কারণে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে বহিস্কার করা হয় তাকে। পরে তিনি ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর মামুনুল হকের হাত ধরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে যোগদান করেন। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল খেলাফত মজলিস বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে। পরে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামির সঙ্গে আট দলীয় জোটে যোগদেয়। বর্তমানে তিনি এ আসনের আট দলীয় জোটের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। সর্বশেষ এ জোটে আমার বাংলাদেশ এবি পার্টিতে যোগদান করায় সৈয়দ তালহা আলম এ জোটের প্রার্থী হতে তৎপরতা চালান। তালহা আলম জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হিসেবে ১২ দলীয় জোটের প্রার্থী হতে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জে ব্যপক জনসংযোগের মাধ্যমে আলোচনায় চলে আসেন। এ জোটে সুবিধা না হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেন। হঠাৎ করে গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিষ্টার ফুয়াদের হাত ধরে এবি পার্টিতে যোগদান করেন। এবি পার্টি আট দলীয় জোটে যোগদান করার আলোচনায় সৈয়দ তালহা আলমের নাম আলোচনায় চলে আসে।
এবিষয়ে জামায়েতের মজলিশে শুরা’র সদস্য, সিলেট মহানগরের পেশাজীবী থানা আমীর সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ইয়াসীন খান বলেন, দলের নির্দেশে আমি দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছি। দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছাকাছি গিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমি আশাবাদী তৃনমুলের নেতাকর্মীদের মতামত কে প্রাধান্য দিয়ে আট দলীয় জোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন,আট দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহীনুুর পাশা ২০২৪ সালের সাত জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ এবং পহেলা আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ফ্যাসিস্ট সরকাদিরের কাছে আনুগত্য প্রকাশ করে জুলাই আগষ্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। এসব কারণে নির্বাচনী এলাকায় ভোটের মাঠে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। মাঠের এসব বাস্তবতা বিবেচনা করলে আট দলীয় জোটের মনোনয়ন আমি পাবো বলে আশাবাদী। এছাড়াও আসনটি উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মতদেন তিনি।
সৈয়দ তালহা আলম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে সুখে দুঃখে রয়েছি। আমার দৃঢ বিশ্বাস জনগন আমাকে মূল্যায়ন করবে। আমার দলের সঙ্গে যদি আট দলীয় জোটের আসন সমঝোতা হয় তখন সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে। আমাকে মনোনয়ন না দিলে জনমত প্রমানের জন্য আসনটি উন্মুক্ত রাখার দাবি করছি।
শাহীনুর পাশা চৌধুরী বলেন, আমি এ আসন থেকে ছয়বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। জোটের অন্য দলের সকলেই নতুন মুখ। অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিবেচনা করেই জোটের মনোনয়ন দেওয়া হবে আশা করছি। তিনি বলেন ৩৫ বছর ধরে মাঠে আছি। এমন কোন গ্রাম নেই, যেখানে আমার কর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী নেই। আমার সাবেক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও এখানে প্রার্থী নেই। জমিয়তের নেতা কর্মীদের সঙ্গেও আমি যোগাযোগ রাখছি।তারাও নিশ্চয়ই আমাকে সুনজরে দেখবেন। আমি দৃঢ আশাবাদী আট দলীয় জোটের মনোনয়ন পাবো। নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমি লড়াই করেছি।বিগত সরকারের শাসনামলে জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। জনগন এসব আমলে নিবে বলে আশাবাদী।

