মৌলভীবাজারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠককে রাজাকার বলায় মুক্তিযোদ্ধাসহ জনসাধারণের প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২২ | আপডেট: ৬:৩৪:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২২

 

বাকা ডেস্ক: মৌলেভীবাজারের একাটুনা ইউনিয়ন পরিষদের স্বাধীনতাত্তোর ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রাক্তন সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত আছকির মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারের বিরুদ্ধে গত ২৭শে জানুয়ারী একাটুনা ইউনিয়ন কার্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এবং মানবাধিকার কর্মি আলিম উদ্দিন হালিম ও ইউপি সদস্য ইমন তরফদারের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন প্রয়াত আছকির মিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রবাসী মোঃ আম্বিয়া মিয়া।

 

প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান খয়ের আহমদ চৌধুরী, সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অনু মিয়া, বীর মুক্তি যোদ্ধা নেছার আহমদ লেচু, মোবাইল ফোন যোগে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল মৌলভীবাজারের সাবেক কমান্ডার মোঃ জামাল আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী মকিছ মনছুর। আরো বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদ, আয়াছ মিয়া, আমিরুল ইসলাম, মোঃ গিয়াস মিয়া, মোঃ সাহাদ আহমদ, মোঃ ফরদুস, জামাল আহমদ, সৈয়দ রুমেল আলী, সাবেক ইউপি সদস্য , জাকারিয়া আহমদ, ও নেছার আহমদ। উপস্হিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক সারওয়ার আহমদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক বদরুল ইসলাম, লেবু মিয়া, সিরাজ মিয়া, নূর মিয়া, রহমান মিয়া, রুহুল ইসলাম রুনু, ফজির খান, নজরুল ইসলাম, মোঃ বদরুজ্জামান, আলহাজ্ব নানু মিয়া, গেন্দু তরফদার, বশির আহমদ। আরো উপস্হিত ছিলেন, বশির আহমদ (সাবেক সেনা সদস্য), হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি মৌলভীবাজার-এর সভাপতি ছালেহ আহমদ সেলিম, এবং পারবেস আহমদসহ ইউনিয়নের সকল স্তরের জনসাধারণ।

 

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য গণমাধ্যমে ছড়ানোকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।

বক্তারা উল্লেখ করেন যে, একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানী সৈন্যদেরকে প্রতিরোধ করতে মৌলভীবাজার জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী ৩/৪ ইউনিয়নের বৃহৎ এলাকার গ্রামগুলি থেকে দেশীয় অস্ত্র -সস্ত্র যেমন, দা, কুড়াল,ঝাটা, জুলফি, লাঠি ও দুইটি বন্দুকসহ পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে শহরের চাঁদনী গাঁট ব্রিজের এক পাশে নিজস্ব বন্দুক হাতে আছকির মিয়াসহ হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে মিছিল নিয়ে শহরের দিকে এগুতে চাইলে ঠিক তখনি পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ। সেই সময়ে যে কয়েকজন নেতৃত্ব দেন তাহাদের মধ্য আছকির মিয়া ছিলেন অন্যতম। সেই সময়ে যে দুটি বন্দুক থেকে পাক হানাদের বিরুদ্ধে গুলি ছোড়া হয়েছিল, সেই দুটি বন্দুকের মধ্য একটি ছিল আকছির মিয়ার মালিকানায়। দুই দিকের গোলাগুলিতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ঐ সময় অনেকই আহত হয়েছিলেন, এর মধ্যে বন্দুক হাতে আছকির মিয়াকে পাকবাহিনীরা ধরে ফেলে এবং শহরের চৌমুহনীতে নিয়ে মারাত্মক ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়।
স্থানীয় লোকজন আছকির মিয়াকে শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে অসুস্থ অবস্থায় আছকির মিয়া পাকবাহিনীর চক্ষু আড়ালে থেকে স্থানীয় মুক্তি যুদ্ধাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে মুক্তি যুদ্ধের জন্য সংগঠিত করেছেন, মুক্তি যুদ্ধাদেরকে খাবার দাবার ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে গত ২৬ ডিসেম্বর সোহেল আহমদ চৌধুরীর ‘মুক্তিযুদ্ধে আনসার কেরানি মহিব উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর অবদান’ শিরোনামে একটি লিথায় মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়াকে “রাজাকার” বলে আখ্যায়িত করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।