পারাবত ট্রেনে আগুন: সিলেট_আখাউড়া সেকশনে সাড়ে ৪ ঘন্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

প্রকাশিত: ৯:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২২ | আপডেট: ৯:৩৭:অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২২

স্টাফ রিপোটারঃ

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও মনু রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী ডাকবেল-চক কবিরাজি এলাকায় সিলেটগামী আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে। শনিবার বেলা পোনে ১টার দিকে ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সাড়ে ৪ ঘন্টা পর শনিবার বিকাল ৫টার সময় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর মাধ্যমে সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
ট্রেনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ও বিমান বাহিনীর ১টি ইউনিট কাজ করে প্রায় দুঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

এ ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ট্রেনে আগুন লাগার খবর জানার পর এসময় যাত্রীরা আতংকে চিৎকার শুরু করেন।
ওন যাত্রীরা চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজনও এগিয়ে আসে। এসময় প্রথমে দ্রুত যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। স্থানীয় লোকজন হাড়ি পাতিল দিয়ে ট্রেনের বগিতে আগুন নিভানোর জন্য পানি মারতে থাকে। পরে ফায়ার সার্ভিস এর লোকজন এসে আগুন নিভাতে শুরু করে।

ঢাকা থেকে সিলেটগামী বরমচালের আলমগীর জানান, ট্রেনটি প্রথমে ব্রাহ্মনবাড়িয়া আসলে প্রথমে জেনারেটর বগীর চাকায় সমস্যা দেখা দেয়, পরবর্তীতে নোয়াপাড়া এসেও বগির চাকার সমস্যা দেখে ট্রেন চলতে থাকে। পরবর্তীতে শমসেরনগর বিমানবাহিনী এলাকায় ট্রেনটি পৌঁছলে প্রথমে নীচে চাকায় আগুন ধরে এবং পরবর্তীতে সমস্ত জেনারেটর রুম ও পাশের দুটি এসিরুমে আগুন ধরে যায়।

ডাকবেল এলাকার স্থানীয় পতনঊষার ইউপি সদস্য সিরাজ খান ও স্থানীয়রা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করে। কিছুক্ষণ পর থেকেই ট্রেনের জেনারেটরের বগিতে আগুনের সূত্রপাত দেখা যায়। পরবর্তীতে তেলের ট্রাংকি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ৩ কি.মি. অতিক্রম করার পর ডাকবেল-চক কবিরাজি এলাকায় যাত্রীদের হাল্লা চিৎকারে ট্রেনটি থামানো হয়। তখন যাত্রীরা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীদের সহযোগিতায় ট্রেনের কর্তৃপক্ষ আগুন লাগা তিনটি বগি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ট্রেনের জেনারেটর বগি ও পার্শ্ববর্তী যাত্রীবাহী দু’টি এসি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

খবর পেয়ে ঘটনার প্রায় ১ ঘন্টা পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কমলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পরে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে সর্বমোট চারটি অগ্নিনির্বাপক দল ও বিমান বাহিনীর একটি অগ্নিনির্বাপন দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় ট্রেনের তিনটি বগি ব্যতীত কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না এবং কত টাকার ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি। অগ্নিকা-ের পর সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
ঘটনার খবর পেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোমাইয়া আক্তার, কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান,
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ, রেলওয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা খায়রুল কবিরসহ প্রশাসন ও রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন।
দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় ট্রেনের সামনের ৯টি বগির যাত্রীরা কুলাউড়া স্টেশনে ও পিছনের বগির যাত্রীরা নিজ নিজ খরচে সড়কপথে সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছান।
আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মো. ইসমাইল বলেন, ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ট্রেন থামানোর পর দেখা যায় চাকার মধ্যে আগুন ও পরে তেলের টেংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ঘটনার পর থেকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লংলা স্টেশনে ও চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীমঙ্গলে আটকা পড়ে। তবে আগুন পুরোদমে নিয়ন্ত্রণে এলে ক্ষতিগ্রস্থ বগীগুলো কুলাউড়া স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লংলা থেকে জয়ন্তিকা ট্রেনটি ৫টায় শমসেরনগর রেল স্টেশন পার হয়ে যায়, এরই মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন মৌলভীবাজারের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কি কারণে আগুন লাগে তা এখনো জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্থানীয় লোকদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আব্দুল হককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দ্বায়িত্ব প্রাপ্তদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া জংশনের ট্রেন পরিদর্শক তৌফিকুল আজিম রুবেল বলেন, উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষ সিলেট বিভাগীয় রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে।