সুনামগঞ্জ আদালতে যুগান্তকারি রায় ফুল হাতে আরও ২৫ দম্পতি, বই হাতে বাড়ি ফিরল ৬৫ শিশু

প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২২ | আপডেট: ১২:৪৬:অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২২

 

মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান :

সুনামগঞ্জে নারী ও যৌতুকের ২৫টি মামলায় ২৫ দম্পতি নিষ্পত্তি এবং শিশু অপরাধে ৫২টি মামলায় ৬৫ শিশু অভিযুক্তকে সংশোধনের বাবা ও মায়ের জিম্মায় মুক্তি দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২০ জুলাই) দুপুর পৌনে ১২টায় শিশু অপরাধের ৫২টি মামলার রায় দেন নসুনামগঞ্জের নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন। পরে দুপুর ১ টায় নারী ও যৌতুকের ২৫টি মামলা অপোষে নিষ্পত্তি করেন।

স্ত্রীদের দায়ের করা মামলায় ওইসব মামলায় আসামি (স্বামী) নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছিলেন। সর্বশেষ স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে আপোষে মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় এ ২৫ দম্পতি ফুল হাতে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেন। একইভাবে ৫২টি মামলায় ৬৫ শিশু প্রবেশনে সংশোধনের ছয় শর্তে মুক্তি দিয়েছেন আদলত। মুক্তিদেন আদালতের বিচারক। এসময় বিরচাকের নির্দেশে আদালতের কর্মীরা প্রবেশনে মুক্তি পাওয়া শিশুদের হাতের মুক্তিযুদ্ধের বই, বাংলাদেশের পতাকা, ফুল আর ডায়েরি তুলে দেন।

আদালত সূত্র জানায়, কোমলমতি এসব শিশুদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মামলায় জড়ানো হয়েছিল, যাদের নামে মারাধরে জড়িত এবং ছোট কিছু চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল। ক্ষুদ্র একটি অভিযোগে এসব শিশুদের আদালতে হাজিরা দিতে হতো। মামলা এবং সাস্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার ফলে শিশুদের ভবিষ্যত এক অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে। ব্যাহত হয় তাদের শিক্ষাজীবন। স্বাভাবিক জীবনে শিশুদের বেড়ে ওঠা হুমকির সম্মুখীন হয়। অভিযুক্ত শিশুদের এসব অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে মামলাগুলো দ্রæত নিস্পত্তি করে দেন বিচারক।

জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শফিউর রহমান জানান, মামলায় অভিযুক্ত ৬৫ শিশুকে কারাগারের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রেখে সংশোধনের জন্য বিচারক তাদের বাবা-মায়ের জিম্মায় ফেরত পাঠিয়েছেন। তবে তারা ৬টি শর্ত পালন করবে। তারা আগামী এক বছর এ নিয়ম পালন করবে এবং আমি তাদের তদারকি করব যদি তারা ব্যর্থ হয় তাহলে আবারও বিচারের সম্মুখীন তাদের হতে হবে।

সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নান্টু রায় জানান, ৫২ মামলায় ৬৫ শিশুকে প্রবেশনে মুক্তি দিয়ে এবং ২৫ দম্পতিকে মিলিয়ে দিয়ে সুনামগঞ্জের ইতিহাসে আরেকটি ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছেন আদালত। এতে করে আদালতে মামলার যে জট তা অনেকটা কমে যাবে বলে আমরা মনে করি।

প্রসঙ্গত, একই আদালতের একই বিচারক এর আগে গত ৮ জুন ৪৫টি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। একইভাবে গত ১৫ মার্চ ৫০ দম্পতিকে নিষ্পত্তির মাধ্যমে মিষ্টিমুখে বাড়ি ফিরেন। গত বছরের ২২ ফেব্রæয়ারি একই ধরনে মামলায় আদালতের উদ্যোগে ৫৪ সংসার জোড়া লাগে। এর আগে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ওই আদালতে ৪৭টি মামলায় ৪৬টি পরিবার নিজেরে ভুলবুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আবার সংসার জীবনের প্রবেশ করে।

একইভাবে একই আদালতের একই বিচারক গত বছরের ১৩ অক্টোবর ৫০ মামলায় ৭০ শিশু অভিযুক্তকে সংশোধনের জন্য অভিভাবকের জিম্মায় দেন। ২০২০ সালে ১৪ অক্টোবর ১০ মামলায় ১৪ শিশুকে সংশোধনের জন্য অভিবাবকদের জিম্মায় সাজা ভোগের রায় দেন। এ দুটি মামলায় আদালত শিশু অভিযুক্তদের বই পড়ে, সামাজিক, পারিবাকি কাজ করে সাজা ভোগের নির্দেশ দেন।