দুই কৃষকের উদ্যোগ, ৫১ একর অনাবাদি জমিতে সোনালি ফসলের ঝিলিক

প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২২ | আপডেট: ৬:৩৭:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২২
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:

অনেক বছর ধরে জমির পর জমি অনাবাদি ছিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মোমিনপুর হাওরে। সেই সব অনাবাদি জমি পরিচর্যা করে এবার দুই কৃষক আমন আবাদ করে সোনার ধান গোলার তুলছেন। বাম্পার ফললে তাঁদের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, হাওরের মাঠে সোনালি ফসল দোল খাচ্ছে। ধানের মৌ মৌ গন্ধ বাতাসে ভাসছে। পাকা ধান গোলায় তুলতে ধান কাটার যন্ত্র দিয়ে ফসল কর্তৃন চলছে।
জানা গেছে, উদ্যোগি দুই কৃষক পৌরএলাকার ইকড়ছইয়ের বাসিন্দা। একজনের নাম সালাউদ্দিন আহমদ। আরেকজনের নাম ফিরোজ আলী।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর ধরে মোমিনপুর হাওরে শত’ শত’ জমি অনাবাদি রয়েছে। জমিগুলো নিচু এলাকায় হওয়াতে আবাদের সময় পানি জমে থাকে এজন্য ফসল ফলানো যায় না। এজন্য চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে অনিহা দেখা দেয়। যে কারণে ক্ষেতের পর ক্ষেত পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে।
আবাদের উদ্যোগ: গত বৈশাখ মাসে কৃষক ফিরোজ আলী হাওরে পরে থাকা পরিত্যক্ত জমিগুলোতে আমন ফলনের জন্য তাঁর সহযোগি কৃষক সালাউদ্দিন আহমদ জানান। এতে সালাউদ্দিন রাজী হন। পরে অনাবাদি জমি পরিচর্যার সিদ্ধান্ত নেন।
শুরু হয় হালচাষ: বৈশাখ মাসের আবাদের শুরুতে ৫০ কেদার (৩০ শতাংশে এক কেদার) জমি প্রস্তুত করা হয়। শুরু হয় হেক্টর দিয়ে হালচাষ। বীজ রোপন কাজ শেষ হওয়ার পর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় সব। তবুও হাল ছাড়েননি দুই কৃষক। হাওরের পানি নেমে গেলে ভাদ্র মাসের শেষের দিকে এবার ১৭০ কেদার জমিতে আবাদ শুরু করেন। জগন্নাথপুর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমনের চারা সংগ্রহ করে রোপন কাজ শেষ হয় আশ্বিন মাসে। রোপনের প্রায় দুই মাস পর এখন জমির ধান পেকে গেছে। প্রায় ৫১ একর জমিতে আবাদ করতে ব্যয় হয়েছে চার লাখ টাকা।
প্রতি কেদারে ধান মিলবে ১৫ মন:
উদোক্তাদের ভাষ্যমতে, হাওরে বাম্পার ফলন হওয়াতে প্রতি এক কেদার জমিতে ১৫ মন ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসাব অনুয়ায়ি ১৭০ কেদার জমিতে ২ হাজার ৫শ’ ৫০ মন ধান পাওয়া যাবে।
উদ্যোগিদের একজন কৃষক ফিরোজ আলী জানান, এ হাওরে বছর পর বছর অনাবাদি ছিল জমিগুলো। এসব পরিত্যক্ত জমি চাষাবাদের আওতায় এনে উচ্চ ফলন শীল ২৩, ৪৯ ও মুক্তা জাতের আমন ফসল ফরিয়েছি। এ কৃষকের দাবী স্থানীয় কৃষক অফিস থেকে চার বস্তা বীজ ও তিন বস্তা সার পেয়েছেন তাঁরা। এর বাহিরে আর কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি।
তিনি জানালেন, বাম্পার ফলন হাওয়াতে প্রতি কেদারে ১৫ থেকে ১৫ মন ধান পাওয়া যাবে। স্থানীয় পর্যায়ে মনপ্রতি ধান ১ হাজার থেকে বারো শত টাকা বিক্রি হয়। সে হিসেবে এক হাজার টাকা দরে মনপ্রতি বিক্রি করলে ১৭০ কেদারে সাড়ে ২৫ লাখ টাকা মিলবে। চাষাবাদে ৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরেক উদ্যাক্তা সালাউদ্দিন আহমদ জানান, মোমিনপুর হাওরে বেশির ভাগ পরিত্যক্ত জমি আমাদের এলাকার। এরমধ্যে অনেকেই আত্মীয় স্বজন। আবাদ করা কোনো জমিই আমাদের নিজস্ব নয়। অনাবাদি জমির মালিকরা তাঁদের জমিতে চাষ করতে বাঁধা দেননি। বরং তাঁরা খুশি হয়েছেন। ফলন ভালো হওয়াতে খুবই আনন্দ লাগছে। আগামীতে এধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার চেষ্ঠা চালাব।
ইকড়ছই এলাকার শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, মোমিনপুর হাওরে তিন কেদার জমি আমার পরিত্যক্ত ছিল। উদ্যোক্তারা আমার জমিসহ এলাকার অনেকের অনাবাদি জমিতে আবাদ করেছেন। তাঁদের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, এক সময় মোমিনপুর হাওরে বোরো ও আমন বছরে এ দুই ধরনের ফসল আবাদ করা হতো। পানি সংকটের কারণে কয়েকজন যুগ ধরে বোরো আবাদ হচ্ছে না। ২০০৮ সালের দিকে একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ডিপ টিউরওয়েল স্থাপন করে এক, দুই বছর বোরো চাষ করা হলেও ওই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে চাষাবাদও বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে আমন চাষের উপযুক্ত সময় হাওরে পানি ও জলাবদ্ধতার দেখা দেয়। একারণে আবাদে আগ্রহ নেই কৃষকদের। ফলে বছরের পর বছর অনাবাদি থাকে ফসলি এসব জমি।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত হোসেন জানান, দুই জনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগে। আমরা তাঁদেরকে পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি যৎ সামান্য সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। এ হাওরে ১৩০ হেক্টর জমি রয়েছে। সব জমিই আবাদের আওতায় রয়েছে। অনাবাদি কোনো জমি নেই বলে এ কর্মকর্তা দাবী করেছেন।