সুনামগঞ্জে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৩ | আপডেট: ১০:৩৪:অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৩

মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান:


 

 

 

সুনামগঞ্জে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। একই আদালত পৃথক ধর্ষন মামলায় আরো দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। জরিমানার টাকা ভিটিমদের ক্ষতিপুরণ হিসেবে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হলেন, জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের মোঃ সফিক মিয়ার ছেলে মো. রাসেল মিয়া (২৫) এবং যাবজ্জীবন দণ্ড প্রাপ্তরা হলেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ডলুরা গ্রামের সমছু মিয়ার ছেলে খলিল আহমেদ (৪৫) ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে আব্দুর রহমান (আব্দুল) (২৯)।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর মো. রাসেল মিয়ার সাথে একই গ্রামের রেছনা বেগমের মেয়ে মনমালাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতে স্বামী রাসেল মনমালাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে রাসেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরর পর রাসেল যৌতুকের দাবিতে আর নির্যাতন করবে না বলে মামলাটি আপোষে নিষ্পত্তি হয়। মামলা নিষ্পত্তির পর ২০১৮ সালের ২৮ জুন মনমালা তার অসুস্থ চাচাকে দেখতে যায়। ওই দিনই রাসেল মনমালাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। পরদিন মনমালা মারা গেছে বলে আত্মীয়-স্বজনদের জানায়। খবর শুনে মনমালার মা গিয়ে তার মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পরে একই বছরের ৮ জুলাই মনমালার মা রেছনা বেগম বাদী হয়ে রাসেল ও তার বাবা মোঃ সফিক মিয়াা এবং মা কবিফুলকে আসামি করে জামালগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানী সাক্ষ্য প্রমান শেষে আদালত মো. রাসেল মিয়াকে মুত্যুদÐ ও মোঃ সফিক মিয়াা এবং কবিফুলকে খালাস প্রদানের আদেশ দেন।

এদিকে, ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চেংবিল গ্রামের এক বিধবা নারী পাশর্^বর্তী ডলুরা গ্রামের সমছু মিয়ার ছেলে খলিল আহমেদের কাছে পাওনা ১২ হাজার টাকা নিয়ে নিজ বাড়ি উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তাকে এগিয়ে দেয়ার কথা বলেন রাত অনুমান সাড়ে ৮টার দিকে ডলুরা গ্রামের আখ খেতে পৌছলে ওই বিধবা নারী জোরপূর্ব ধর্ষন করে খলিল। এসময় বিধবা নারীর চিৎকার শুনে আশে পাশের লোক জন এসে খলিলকে আটক করের স্থানীয় পঞ্চায়েতের নিকট সোপর্দ করেন। পঞ্চায়েতে মীমাংসা না হওয়ায় নালিশকারী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে ওই বিধবা নারীর গর্ভবতী হয়ে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। আসাসি ওই নারীকে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়ার শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায়ও প্রমাণিত হয় ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া শিশুর পিতা হচ্ছে আসামি খলিল আহমদ। সাক্ষ্য প্রমান শেষে গতকাল দুপুরে আসামি খলিলকে যাবজ্জীন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে জারিমানার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই নারীকে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।

অপরদিকে, ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠে গ্রামীণ মেলা ও ঘোড়ার দৌড় দেখে কৃষ্ণনগর গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে বাড়ি ফিরছিল। বিকেল অনুমান সাড়ে ৫ টার দিকে একই গ্রামের ফিরোজ মিয়ার বাড়ির সামনের সরকারী খালের পাড়ে আসামাত্রই আসামি আসামি আব্দুর রহমান ওই কৃষকের ময়েকে ডেকে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ওই কৃষক সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় আসামি আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সাক্ষ্য প্রমান শেষে আদালত আব্দুর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। জরিমানার টাকা ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালতের বিচারক।