কুলাউড়া বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে দেশি-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে বিএনপি পরিবারের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে-কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা জি.কে গউছ

প্রকাশিত: ৭:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫ | আপডেট: ৭:৪১:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি. কে. গউছ বলেছেন, দেশি-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে বিএনপি পরিবারের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশ থেকে আওয়ামীলীগ পালিয়েছে ঠিকই কিন্তু আওয়ামী শক্তি মিলে যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আওয়ামীলীগের মন্ত্রী, এমপি সবাই পালিয়েছে কিন্তু তাদের বীজ এদেশে রেখে গেছে। সেই বীজ আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। একটি দল তাদের ছত্রছায়ায় সেই বীজকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আগামী নির্বাচনে তাদের সহযোগিতা নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন লড়াই হবে এবং সেই লড়াইয়ে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি বিএনপির বিজয় হবে।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পৌর শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যে জাতি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যে জাতি নিজের অধিকারের জন্য বুক পেতে দিয়েছে, সেই জাতিকে কেউ কোনদিন রুখতে পারেনি। দেশের মানুষের ভালবাসা যদি বিএনপির সাথে থাকে, দেশে বিদেশের কোন চক্রান্ত বিএনপিকে রুখে দিতে পারবে না। বিএনপি সারা বাংলাদেশের মানুষের মণিকোঠায়।

 

 

 

 

জি কে গউছ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতির সামনে যে ৩১ দফা দিয়েছেন, সেই ৩১ দফাই হচ্ছে জাতির মুক্তির রক্ষাকবচ। তারেক রহমান অত্যন্ত দূর দৃষ্টি সম্পন্ন। আজকে থেকে দুই বছর আগেই তো জাতির সামনে সেটি দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি কাউন্সিলের মাধ্যমে সারাদেশে নেতৃত্ব সৃষ্টি করছে। এটার মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা শুরু হয়েছে। কাউন্সিলে নেতা নির্বাচন করবেন এই নেতৃত্বের মাধ্যমে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি সমস্ত চক্রান্তকে প্রতিহত করতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাই হবে আমাদের মূল কাজ।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. রেদওয়ান খানের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য এডভোকেট আবেদ রাজা, মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, সদস্য আব্দুল মুকিত, বকশী মিসবাহুর রহমান, ফখরুল ইসলাম, মোহিতুর রহমান হেলাল, আবুল কালাম বেলাল, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান মজনু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিএনপির বিগত সময়ের প্রয়াত নেতাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বহির্বিশ^ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ড. সাইফুল আলম চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিগত ১৭ বছর বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের হাজার হাজার নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সিলেটের কিংবদন্তী নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীরা নির্যাতন, গুম, খুন হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, দেশি-বিদেশি শত্রুরা চায়না জাতীয়তাবাদী শক্তি বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে তখনই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছিলো। আমাদের মধ্যে এখনও বিভিন্ন ব্যক্তি চর্চা রয়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সত্যিকারভাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে আর সেই ঐক্যবদ্ধ হবে ইস্পাত কঠিনের মতো।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি এম নাসের রহমান জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, একটি বিশেষ দল রয়েছে তাদের টাকার কোন অভাব নেই। ওদের ব্যাংক, হাসপাতাল রয়েছে। ওদের বড় বড় নেতারা বেতনভুক্ত। টাকা তাদের কাছে কোন ফ্যাক্টর নয়। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে খুবই কঠিন। আওয়ামীলীগ ওই দলের ওপর ভর করে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দিবে, তারা বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য মরিয়া হয়েছে। বিগত ১৬টি বছর বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আওয়ামী পুলিশ লীগ রাজনৈতিক মাঠে আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। আগামী নির্বাচনে আমাদেরকে দুটি দল আওয়ামীলীগ ও জামায়াতের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। আ’লীগ ঘাপটি মেরে বসে আছে আর ওই দল বলে তারা নাকি ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। ওই বট বাহিনীকে প্রতিহত করতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পদের পেছনে ও নেতার পেছনে না ছুটে মাঠে নেমে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

শনিবার কুলাউড়া উপজেলায় ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি¯œাত দিনে দুপুর ১২টায় জাতীয়, দলীয় সংগীত ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এসময় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দসহ ১৩টি ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন পর কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ছিলো ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে শত শত নেতাকর্মী সম্মেলন ও কাউন্সিলে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে আগত কাউন্সিলরদের জন্য উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে কুলাউড়া উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ৯৩৫ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন দুইবারের সাবেক সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু, সাবেক সভাপতি ও কুলাউড়া পৌরসভার পাঁচ বারের কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন বাচ্চু। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল হোসেন খান, বিএনপি নেতা জয়নুল ইসলাম জুনেদ। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী, বদরুজ্জামান সজল ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা সুফিয়ান আহমেদ। সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি, জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মইনুল হক বকুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক বিএনপি নেতা সারোয়ার আলম বেলাল। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আব্দুল মুক্তাদির মনু, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল ইসলাম ইমন, বিএনপি নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা সিপার আহমেদ, ব্রাহ্মণবাজার বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন স্বপন।