জগন্নাথপুরে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৪:২২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২ | আপডেট: ১১:৪২:পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২

 

সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান ও জগন্নাথপুর প্রতিনিধি :


সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে চাঞ্চল্যকর শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নার নামের এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি (পলাতক) জিতেশ চন্দ্র গোপকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে সিআইডির একটি টিম ঢাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার  নিহত শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নার ভাই হেলাল মিয়া বাদী হয়ে জিতেশ চন্দ্র গোপকে প্রধান আসামি করে জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যামামলা করেন।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)তে
হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুর শহরের পৌর পয়েন্টের একটি মার্কেটের অভি মেডিকেল নামের এক ফার্মেসি থেকে ওই নারীর খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়েনের নারিকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছরুক মিয়ার স্ত্রী।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ মালিকানাধীন বাসায় সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী তার তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
বাসার নিকটবর্তী ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটে অভি মেডিকেল ফার্সেমিতে ওষুধ ক্রয়সূত্রে যাতায়াত করতেন। বুধবার বিকেলে ফার্মেসিতে
যাচ্ছেন বলে বাসা থেকে বের হন শাহনাজ। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ।
এদিকে, নিহতের ছোট ভাই তার বোন বাসায় ফেরেননি জানতে পেরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই ফার্মেসিতে গিয়ে দেখে ফার্মেসি বন্ধ। পরে ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে মোবাইলে কল দিলে তিনি জানান, তার বোন ওষুধ না পেয়ে চলে গেছেন।

নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে অন্য এক নারী ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি (নিহত নারী) সিলেট ওসমানীতে আছেন। সেখানে যোগাযোগ করেও তার সন্ধান মেলেনি।

পরে আরেকবার ফোন দিলে একই নারী ফোন রিসিভ করে জানান, শহরের আর্ট স্কুল এলাকায় আছেন। একেক সময় একেক কথা বলে বিভ্রান্ত করতে থাকেন ওই নারী। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে শাহনাজের ফোনটি বন্ধ
পাওয়া যায়।

রাতভর বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও নিহত শাহনাজের সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
সাজেদুল ইসলামের উপস্থিতিতে জগন্নাথপুর থানার পুলিশ তালাবদ্ধ অভি ফার্মেসির তালা ভেঙে দোকানে অভিযান চালায়। এ সময় দোকানের রোগী দেখার
টেবিলের নিচে বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো ওই নারীর শরীর ছয় টুকরা (গলা, পেট, হাত-পা) বিচ্ছিন্ন অংশ দেখতে পায় পুলিশ।

ঘটনার পর থেকে ফার্মেসির মালিক জিতেশ গোপ পলাতক ছিলেন। জিতেশ গোপ কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সইলা গ্রামের যাদব গোপের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছেন।

নিহতের ছোট ভাই হেলাল মিয়া জানান, বুধবার তার বোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। তবে কত টাকা তুলেছেন, তিনি তা জানেন না। তার বোনকে হত্যা
করা হয়েছে। তিনি এই হত্যার বিচার চান। হেলাল আরও জানান, তার বোনজামাই দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। বোনের পরিবারের সঙ্গে তিনি শহরে বসবাস করেন। নিহত নারীর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ ওই ফার্মেসির সিলিং থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে,
ওই ছুরি দিয়েই শাহনাজকে হত্যা করা হয়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।