তিন অনাথ কন্যার বিয়েতে প্রধান মন্ত্রীর উপহার

প্রকাশিত: ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২২ | আপডেট: ১২:৫০:পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২২

 

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামে জমকালো আয়োজনে অভিভাবকহীন তিন কন্যার (মর্জিনা, মুক্তা ও তানিয়া) বিয়ে দিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত শিশু পরিবারের তিন কন্যার বিয়ে দাওয়াত কার্ড পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই হাজার অতিথি।

সানাইয়ের সুরে বিয়ের রঙিন সাজে সাজেন তিন কন্যা। যাবেন নতুন ঠিকানায়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটিতে পাশে থাকার কথা মা-বাবা, পরিবার-পরিজন। তবে তারা না থাকলেও পাশে আছে আত্মার সম্পর্কের এক বিশাল পরিবার। বলছি, সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত শিশু পরিবারের তিন কন্যার বিয়ের কথা। যাদের বেড়ে ওঠা সেখানে। তিন দম্পতির জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের আয়োজন করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক নিজেই।
তিন কন্যা বলেন, ‘আমাদের মা-বাবা থাকলে আজ যা করতেন, জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের জন্য তা-ই করেছেন। তিনি কোনো কমতি রাখেননি। এভাবে আমাদের বিয়ে হবে, তা কখনো ভাবতে পারিনি।’

 

এর আগে তিন কন্যা বউ সেজে গাড়িতে করে আসেন ক্লাবে। সঙ্গে বর যাত্রীও। ছিল গেটে সালামির জন্য বর আর কনেপক্ষের তর্কাতর্কি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে দুই ভরি স্বর্ণালংকার, দুই লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ও প্রয়োজনীয় আসবাব দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘এরা আমার মেয়ের মতো। তাদের বিয়েতে যাতে কোনো ধরনের কমতি না হয়, এজন্য সব আয়োজন করা হয়। তিন মেয়ের অনুষ্ঠানে এক হাজার অতিথির জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমার তিন কন্যার জন্য দোয়া করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকেও এ বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বিয়ের দাওয়াত কবুল করেছিলেন। তিন মেয়ের জন্য স্বর্ণালংকার পাঠিয়েছেন।’

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল আলম বলেন, ‘তিন তরুণীর মধ্যে একজনকে কুড়িয়ে পাওয়া গেছে পথের ধারে, অন্যজনকে হাসপাতালে এবং আরেকজনকে পাওয়া যায় রাস্তায়। সে সময় একজন তিন মাস, একজন ছয় মাস এবং অপরজনের বয়স ছিল এক বছর। তাদের নিয়ে আসা হয় সমাজসেবা পরিচালিত শিশু নিবাসে। এখানেই তাদের মাতৃস্নেহে বেড়ে ওঠা। একেক জনের বয়স এখন ১৮ থেকে ২০ বছর। এর মধ্যে একজন বিবিএ পড়ছে। বাকি দুজন এসএসসি পাস করেছে। তিন তরুণী এখন চাকরি করছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে।’

এর আগে, বুধবার সরকারি শিশু পরিবার অঙ্গনে উৎসবমুখর পরিবেশে হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।

বিয়েতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনের এমপি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম মহিলা আওামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহাবুবুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দর চৌধুরী বাবুলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।