কুলাউড়ায় মাসব্যাপী মেলা নিয়ে ক্ষোভ, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১০:০৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৩ | আপডেট: ১০:০৩:অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৩

মোঃ ইব্রাহীম আলী, কুলাউড়া : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে মাসব্যাপী হস্ত কুটির শিল্প মেলার আয়োজন নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলের লোকজন। তারা অনতিবিলম্বে এই মেলার অনুমোদন বাতিলের দাবি জানান। এছাড়া আগামী ১৭ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষা শুরু। এই মেলা আয়োজন হলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটবে বলে আশংকা অনেকের। স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ না করে এ মেলার আয়োজন করায় এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ী ও পরীক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে মেলা বন্ধ চান এলাকাবাসী। মেলা বন্ধ না হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে মেলা বন্ধের দাবিতে দফায় দফায় রবিরবাজারে বৈঠক হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মাইকিং করে সভাও করা হয়েছে। সর্বশেষ ব্যবসায়ী সমিতির নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ জেলা প্রশাসক বরাবরে মেলা বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। গত ৯ আগস্ট বুধবার রবিরবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সমিতির সহ সাধারন সম্পাদক শেখ সাজন আহমদের সঞ্চালনায় ও সহ সভাপতি আব্দুল হাই সেলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন রাজনীতিবিদ আব্দুল গাফ্ফার কায়ছুল, সৈয়দ আব্দুল মুনিম রুহেল, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আব্বাস আলী, সমাজকর্মী নবাব আলী হাসি খান, তানভির ইসলাম তৌফিক, ফরহাদ হোসেন, শরীফ আহমদ, ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মনু, সুয়েজ আহমদ নয়ন, সুমেল আরেফিন প্রমুখ। মানববন্ধনে রবিরবাজার আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকার সাধারন জনগণ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ৬ আগস্ট মেলা বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেয় রবিরবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। এলাকায় কলেজ পড়–য়া ছাত্রছাত্রীরা পড়বেন সমস্যায়। তাদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটবে। এছাড়া রবিরবাজার সংলগ্ন প্রায় অর্ধকিলোমিটারের মধ্যে মেলা হলে ব্যবসায়ী বাণিজ্য প্রভাব পড়বে। মাসব্যাপী মেলার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া মদ, জুয়া, গাঁজা, নাচ, গান, নৃত্যের অশ্লীলতা, উঠতি বয়সী যুবক যুবতীদের অবাধ আড্ডা ও মারামারিসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড মেলায় ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজার সংলগ্ন জাকারিয়া আহমদ খালেদের বাগান বাড়ি মাঠে এ মেলার আয়োজন করেছে মা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর দায়িত্বে রয়েছেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের আবিদ হাসান লিটন নামে এক ব্যক্তি। গত ২৩ জুলাই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেএম শাখার সহকারী কমিশনার মোছাঃ মলি আক্তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

রবির বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় জনসাধারণ ও ইউনিয়ন পরিষদ কেউই এই মেলা সম্পর্কে জানেন না। মেলার আয়োজনকারীদের উদ্দেশ্যই মূলত-এলাকায় সংঘাতের সৃষ্টি করা। এখানে মেলা হলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। মেলা বন্ধ না হলে ব্যবসায়ীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে জানান তিনি।
পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুল বলেন, এলাকার ব্যবসায়ী ও মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে মেলা না হওয়ার জন্য লিখিত আবেদন দিয়েছি এবং উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উথাপন করা হয়েছে। মেলা বন্ধ না হলে এলাকার সকল স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠে আন্দোলনে নামবে। এমনকি সোমবার উপজেলার আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। তাই জনস্বার্থে তিনি এখানে মেলা না করার জন্য আয়োজকদের অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে মেলার আয়োজক আবিদ হাসান লিটন বলেন, শর্ত মেনেই মেলা আয়োজন করবো। মেলার প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কোন ব্যাঘাত ঘটবে না কারণ আমি ওই সকল প্রতিষ্ঠান সীমানার অনেক বাইরে মেলা করছি। আগামী ১৭ আগস্ট মেলা উদ্বোধন হবে।

স্থানীয় লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আতাউর রহমান বলেন, মাসব্যাপী মেলা হলে স্বাভাবিকভাবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উপর প্রভাব পড়বে। পরীক্ষার সময় মেলা আয়োজন না করে পরীক্ষার পর করলে কোন সমস্যা হতো না।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, মেলা আয়োজনে যদি স্থানীয় জনগণের যৌক্তিক আপত্তি থাকে তাহলে আয়োজককে সেটি চিন্তা করতে হবে। অনুমতি নেয়ার আগে স্থানীয় এলাকার মানুষের সাথে আলোচনা করা দরকার ছিল। মেলার আয়োজনকারীদের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা যাতে শান্ত থাকে সেদিক বিবেচনার জন্য বলা হয়েছে।

পৃথিমপাশার বাসিন্দা, সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান জানান, মেলা সম্পর্কে এলাকার জনসাধারণ, ব্যবসায়ীসহ ইউনিয়ন পরিষদ কেউই অবগত নয়। এ মেলা নিয়ে এলাকায় কয়েকটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। মেলা এখানে না হলে এলাকার জন্য মঙ্গল হবে।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে শর্ত মোতাবেক এ মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মেলা এখনো শুরুই হয়নি। সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।