বাংলাদেশে গোলা পড়ায় মিয়ানমারের দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশিত: ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২২ | আপডেট: ১১:১৫:পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২২

তিন মাস ধরে চলা সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশে পড়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। উত্তেজনা কমিয়ে আনতে এবং অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচাররোধে একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী।

প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক শেষে এ সব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ ইফতেখার।

রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির ‘সাউদার্ন পয়েন্ট’ এর সম্মেলন কক্ষে বিজিবি ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিপির মধ্যে কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে এ ঐক্যমত হয়।

সকাল পৌনে ১০টার দিকে টেকনাফ এসে পৌঁছায় মিয়ানমারের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে তাদের স্বাগত জানানোর পর শাহপরীর দ্বীপ বিওপিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পতাকা বৈঠকে মিলিত হয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী।

মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কাও না ইয়ান শো। আর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।

সীমান্তের গোলাগুলির পরিস্থিতিতে বার বার কড়া প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি উত্তেজনা কমাতে মিয়ানমারের বিজিপির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিজিবি। পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দিলে অবশেষে দীর্ঘ ৩ মাস পর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে সম্মত হয় মিয়ানমার।

লে. কর্নেল শেখ খালিদ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আসা গোলা পড়ে বাংলাদেশে হতাহতের ঘটনা, মাইন পুঁতে রাখা, মিয়ানমারের নাগরিক আর অনুপ্রবেশ না করা, মাদক চোরাচালান বন্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। ভবিষ্যতে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে কোনো ধরণের গোলা বা মাইন যাতে আমাদের সীমান্তে পুঁতে রাখা না হয়, সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করা হয়েছে।’

মিয়ানমার প্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে সীমান্তে বসবাসরত সাধারণ বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’

বৈঠক শেষে রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আজিজুর রউফ বলেন, ‘এটি নিয়মিত চলতে থাকবে। বৈঠক হলে দুই দেশের সীমান্তের নানা ঘটনার বিষয়ে আলোচনা সম্ভব হয়। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। পাশাপাশি ভয়-আতঙ্কে ছিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, দৌছড়ি, উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের মানুষ। এসব বিষয়ে তাদের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।’

সীমান্তে উত্তেজনার রেশ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও রাখাইন প্রদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ। গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমারে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে।

সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া আরও দুটি মর্টার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। একইদিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান।

এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর আবারও বাংলাদেশে অভ্যন্তরে এসে পড়ে কয়েকটি মর্টার শেল। যার মধ্যে শূণ্যরেখায় মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়ে মারা যান এক রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আহত হয় আরও ৬ জন।

তুমব্রু সীমান্তে বন্ধ হতেই নতুন করে উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত ও টেকনাফ সীমান্তে শুরু হয় গোলাগুলি।

সবশেষ গত ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। দুইদিন চলার পর এখন পর্যন্ত আর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি।

সীমান্তে কোনো রকম উত্তেজনা চান না সীমান্তের বাসিন্দারা। আর নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই রাষ্ট্রের জন্য ভুলবোঝাবুঝি হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার বার্তা দেয়াই হবে পতাকা বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।