অমরাবতির গল্প-(২৪)—–মোঃ শেবুল চৌধুরী

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৩ | আপডেট: ১২:৫৯:পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০২৩

অমরাবতির অন্যতম প্রধান শ্লোগান হচ্ছে “গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান”।শুধু শ্লোগান বলা যাবে না। ইহা অমরাবতির মূলমন্ত্র ।এই মূলমন্ত্রকে ধারন করে অমরাবতির পথ চলা।এই পথে চলতে গিয়ে ২০২১ সাল থেকে অমরাবতি উদ্যোগ নিয়েছে বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর। শুরুটা সিলেট থেকে হলেও পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে এই কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। বৃক্ষরোপন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হলে রোপিত চাঁরার দায়িত্ব নিতে হয় কাউকে না কাউকে। দায়িত্ব এবং সচেতনতা–এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারলে রোপিত চাঁরা বাঁচবে। সুতরাং আমরা অতি গৌরবের সহিত বলতে পারি অমরাবতির সিলেট চাপ্টারের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তারাই মূলতঃ বৃক্ষরোপন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছেন। তন্মধ্যে অন্যতম প্রধান উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন অমরাবতির সিলেট জেলার অন্যতম প্রতিনিধি, বৃক্ষপ্রেমিক এবং বিশিষ্ট বাগান বিলাসী আহমেদ জিন্নুন দারা। যাঁর স্বপ্ন রয়েছে একটি আধুনিক বাগানের।এই স্বপ্নগুলো নিয়েই অমরাবতির গল্পের কাব্যে।আসুন জেনে নেই কি রয়েছে অমরাবতিয়ান আহমেদ জিন্নুন দারার গল্পে।

 

 

 

 

একটি বাগান, একটি স্বপ্নঃ
এরিস্টটলের মতে মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই রাজনৈতিক জীব। তবে মানুষের স্বভাবজাত আরেকটি বৈশিষ্ট্য, প্রায় সবাই গাছ ভালবাসে। হয়ত নানা কারণে অনেকের সুযোগ হয় না এই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে বৃক্ষ রোপন বা গাছের প্রতি মমতা এই অঞ্চলের মানুষের কতটা প্রবল সেটা সহজেই অনুমান করা যায় চারপাশের পরিবেশটা দেখেই। ছোট বেলায় স্কুলে পড়াকালীন প্রিয় শখ রচনায় আমরা বেশিরভাগই বাগান করাকেই অগ্ৰাধীকার দিয়ে লিখতাম। এটা আমাদের মজ্জাগত অভ্যাস। তবে বাস্তবে সেটার প্রতিফলন অনেকাংশে হয়ে ওঠে না।

 

 

 

 

 

তার প্রধান কারণ জায়গার অভাব। গ্ৰামের কথা ভিন্ন। শহরে বসবাসকারী বেশিরভাগের সদিচ্ছা থাকলেও প্রায়শই সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাসস্থানের বাইরে যে সামান্য অংশ থাকে সেটুকুতে বিশাল কিছু করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।আর মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্পটা তো সবারই জানা, সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ফারাক টা বিস্তর! তাই সীমিত জায়গায় লাউ, পেঁপে, শীম এবং সন্ধ্যামালতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। ছোটবেলায় পাইলট স্কুলে পড়াকালীন প্রতিদিনই সার্কিট হাউসের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। সারি সারি কৃষ্ণচূড়ার নীচ দিয়ে আমরা বন্ধুরা মিলে হেঁটে যেতাম। ২/৩ জন মালি সর্বদা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতেন। সুন্দর সুন্দর ফুল আর নানান প্রজাতির দেশীয় ফলের গাছ দেখে অপার আনন্দ পেতাম। মনে মনে ভাবতাম বড় হয়ে এরকম কোন একটা কিছু নিজেই করব।

 

 

 

 

 

জীবিকার তাগিদে একসময় পাড়ি জমালাম টেমস নদীর শহর বিলাতে। প্রায় অর্ধ যুগ কাটালাম। কাছে থেকে দেখার সুযোগ ও সৌভাগ্য হয়েছিল ফুল, ফল আর সবজির সৌখিন ও বানিজ্যিক আবাদ। প্রচন্ড উৎসাহিত হলাম। লক্ষীদেবীও আমার উপর কিছুটা সদয় হলেন। স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। মাথার মধ্যে ” নুহাশ পল্লীর” মত কিছু একটা করার। লন্ডন থেকে ফেরার পর একটা ভালো মওকা পাওয়া গেল। প্রস্তাব আসল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় সমন্বিত কৃষি প্রকল্প কিনে নেয়ার।১৬ বিঘা জমির ওপর ৪ টা পুকুর আর অসংখ্য গাছ গাছালি। দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হল না। কয়েক বন্ধুর সহায়তায় পুরোটাই ক্রয় করলাম। আবেগের বশবর্তী হয়ে কেনার পরই বুঝলাম আমার স্বপ্ন পূরনের জন্য এই প্রকল্প যথেষ্ট নয়। প্রায় তিন চতুর্থাংশ জলাশয়ের বাইরে তিন শতাধিক নানান জাতের ফলজ আর বনজ বৃক্ষ। দেখে নয়ন জুড়ায় বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ভাবে প্রকল্পটি তৈরি করার কারণে আমার কাঙ্খিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে ওঠে নি। প্রতি ইঞ্চি জায়গা বানিজ্যিক ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা ছিল সবার। যেহেতু অংশীদারী ব্যবসা, তাই মনের মাধুরী মিশিয়ে রাঙিয়ে তুলা বা নতুন করে প্রলেপ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি। তবে বানিজ্যিক ভাবে এটা ছিল খুবই সফল।

 

 

 

 

 

তবে হাল ছাড়িনি, চেষ্টা করে যাচ্ছি। অমরাবতির সাথে যুক্ত হবার পর এবং এর কার্যক্রম দেখে নতুন করে আন্দোলিত হলাম, উৎসাহিত হলাম প্রচন্ড ভাবে। আমার আর অমরাবতির স্বপ্ন এক বিন্দুতে যখন মিলিত হবে তখন নিশ্চয়ই আমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। শত শত আম, জাম, কাঁঠাল লিচু সহ সব ধরনের দেশজ ফল আর নানাবিধ ফুলের ঘ্রানে মনমাতানো আর চোখজোড়ানো দিগন্ত বিস্তৃত আমার স্বপ্নের বাগান হয়ে যাবে আমাদের বাগান, অমরাবতির বাগান। যেখানে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারব সকলে মিলে। সেই দিন টির স্বপ্ন দেখি ভীষন রকম!!