অমরাবতির গল্প–(৩৫)—-মোঃ শেবুল চৌধুরী

প্রকাশিত: ১১:০২ পূর্বাহ্ণ, জুন ২২, ২০২৩ | আপডেট: ১১:০২:পূর্বাহ্ণ, জুন ২২, ২০২৩

অমরাবতির গল্প মানেই পারিবারিক পরিমন্ডলের গল্প। যে গল্পের মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকে গাছ- পালা, ক্ষেত- কৃষির কথা। থাকে সব্জি ও ফুল বাগানের কথা । গ্রাম ও শহরের মধ্যে অনেক অনেক ভিন্নতা থাকে বিধায় একেক জনের গল্পে ভিন্নতা পাওয়া যায়। আজ আমরা জানবো লন্ডনে বসবাসরত অমরাবতির অন্যতম সদস্যাএবং অমরাবতি ডাইরেক্টরস বোর্ডের অন্যতম সদস্যা মিসেস হেনা বেগমের বাগান প্রীতির গল্প। আসুন জেনে নেই কি রয়েছে অমরাবতিয়ান হেনা বেগমের গল্পে।

 

আমার বাবার বাড়ী জগন্নাথপুর উপজেলার সুনামধন্য হবিবপুর গ্রামে। গ্রামেই পরিবারের সাথে আমার বেড়ে উঠা। আমি জানি আমাদের গ্রামের একটা ঐতিহ্যে ছিল, তাহলো প্রাচীণকাল থেকেই আমাদের গ্রামের একেকটা বাড়ী একেকটা কৃষিকেন্দ্রে পরিনত ছিল। আমাদের পরিবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আমার মা ছিলেন একজন বৃক্ষপ্রেমী। নিজের হাতে ফল ফলাদির গাছ লাগাতেন। শাকসব্জি ফলাতেন বাড়ীর চাঁরপাশে। শাকসবজি আমাদের বাজার থেকে কিনে খাওয়া লাগতো না। নিজেদের ফলানো শাকসবজি দিয়ে আমাদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবেশীদেরও দিতেন আমার মা-চাচীরা। ফলের মৌসুমে আমাদের ফলের গাছগুলো ফলে ফলে ভরে উঠতো। আমাদের বাড়ীতে ছিল সারি সারি আম, জাম ও নারিকেল গাছ। একদম ফ্রেশ ফল আমরা খেতাম এবং প্রতিবেশীদের বিলিয়ে দিতাম। এছাড়াও আমাদের পরিবারের সরিষাক্ষেত এবং বাদাম ক্ষেতও ছিলো নাড়িকেল তলায়। ছোটবেলায় চাচা-চাচীদের সাথে আমি সেইসব ক্ষেত দেখতে এবং পরিচর্যা করতে যেতাম। সেইসব স্মৃতি মনে হলে আজো এক সুখের অনুভূতি মনে জাগে।

 

 

 

 

 

১৯৭৬ সালে জগন্নাথপুর থানার ইসলামপুর গ্রামে আমার বিয়ে হয়। আমার শ্বশুরবাড়িতে শ্বাশুড়ি, চাচী-শ্বাশুড়ী, ননদ প্রায় সবাই গাছপালা ও শাকসবজি ফলানোর ক্ষেত্রে খুবই আগ্রহী ছিলেন। এখানে এসেও আমি আমার অভ্যাস অনুযায়ী লাউ, সিম, কুমড়া ইত্যাদি রোপন করেছি। বিবাহের কিছুদিন পর আমরা স্থায়ীভাবে চলে যাই সিলেটে। শিবগঞ্জের সোনারপাড়ায় ছিলো আমাদের বাসা। শহরে গেলেও গাছের প্রতি আমার ভালোবাসার টান সব সময় ছিল। বাসার ছাদে টবের মধ্যে প্লান্টিং করেছি। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যে চলে আসি। এখানে আসার পর ১৯৮০ সালে কাজে জয়েন করি। একই সাথে স্টাডিও কন্টিনিউ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক & রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকতাম সবসময়। তারপরেও সামার টাইমে গার্ডেনিং করেছি। নানান জাতের শাকসবজি ফলিয়ে খেয়েছি। লন্ডনে থেকেও এরকম কাজ করে জন্মভূমি বাংলাদেশের একটা স্বাদ পেতাম। সেজন্য শত ব্যস্ততার মাঝেও প্লান্টিংয়ের কাজ ছাড়িনি। নিজে প্লান্টিংয়ের কাজ করার পাশাপাশি পরিচিত বন্ধুবান্ধবদেরও উৎসাহ দিতাম। বয়স এবং শারিরীক কিছু সমস্যার কারণে কাজ থেকে রিটায়ার্ড হয়েছি ২০১৩ সালে। এরপরে ও নিজের গার্ডেনে প্লান্টিং চালিয়ে গেছি। মানুষকে উৎসাহিত করেছি। প্লান্টিং একটা চির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যেন।

২০১৯ সাল থেকে বৃক্ষরোপন সংক্রান্ত বিশ্বখ্যাত “অমরাবতি” সংগঠনের সাথে জড়িত হই। এর সাথে জড়িত হওয়ার পরে পুরোদমে প্লান্টিংয়ের দিকে আবার মনোনিবেশ করি। নিজে আবারো বেশী করে হাউজ প্লান্ট, মানি প্লান্ট, ফুলগাছ সহ বিভিন্ন ধরনের প্লান্টিং শুরু করি।

পরিশেষে যে কথাটি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই-তাহলো, মানুষের প্লান্টিংয়ের কাজে বেশি করে জড়িত হওয়া দরকার। কারণ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য গাছ-গাছালি খুবই জরুরি। এছাড়া প্লান্টিং করলে শরীর মন দুটোই ভালো থাকে৷ গাছ মানুষের প্রকৃত বন্ধু। গাছের সাথে চাইলেই অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয়া যায় তার যত্ন-আত্বির মাধ্যমে। তাই আমরা যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেশী বেশী বৃক্ষরোপনের দিকে মনোযোগ দেই। সবাই মিলে গড়ে তুলি এক সবুজ শ্যামল পরিবেশ। আগামীর প্রজন্মের জন্য রেখে যাই এক নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী ।।