অমরাবতির গল্প-২৭ —মোঃ শেবুল চৌধুরী

প্রকাশিত: ১:১১ পূর্বাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৩ | আপডেট: ৫:৩৯:পূর্বাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৩

অমরাবতির গল্প মানে প্রকৃতিকে ভালোবাসার গল্প। অমরাবতির গল্প মানে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের গল্প।অমরাবতির গল্প মানেই পূর্ণিমার রাতের চাঁদ দেখার গল্প।অমরাবতির গল্প মানেই গাছ গাছালীর গল্প,বাগানের গল্প। অমরাবতিয়ানরা শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ সবের খোঁজে।এ রকম একজন প্রকৃতি প্রেমিক হচ্ছেন অমরাবতির অন্যতম সদস্যা এবং অমরাবতির নিউওর্য়ক প্রতিনিধি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রকৃতি প্রেমিক,ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোর্শেদা নাসরিন রুমু। যিনি আমেরিকা থেকে অনেক কিছু দেখেও প্রতিনিয়ত হয়তো মিস করছেন বাংলাদেশের গাছ গাছালী, বাগান,হাওর, বনজঙ্গল, পরিবেশ ।অমরাবতির ক্যাফেলায় যুক্ত হয়েছেন পরিবেশকে খুঁজে পাওয়ার জন্য, বাগান বিলাসীদের পাওয়ার জন্য।আর কথা নয়,এবার আসুন জেনে নেই কি রয়েছে শিক্ষিকা মোর্শেদা নাসরিন রুমুর গল্পে।

 

 

সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি গাছপালা ঘেরা বাড়িতে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আমাদের বাসাটির চারিদিকে যেন সবুজের সমারোহ। বহু বছরের পুরানো ফল-ফুলের গাছের সাথে আমার ছোটবোন ডাঃ খুরশেদা তাহমিন সীমু যোগ করেছে হরেক রকমের দেশি-বিদেশি অর্কিড। বাসায় একটা পুকুরও আছে। শহরের মাঝখানে এমন একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ হাতেগোনা কিছু বাসাতেই এখন দেখা যায়। এদিক থেকে আমরা খুবই ভাগ্যবান।

 

ছোটবেলায় দেখতাম আব্বা কি গভীর মমতায় বাড়ীর আঙিনা, বাগান পরিপাটি করে রাখতেন। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে গাছপালা গুলোর ডালপালা ছাঁটিয়ে দেয়া হত। শীতকালে চাচার সাথে আমরাও লেগে যেতাম মাটি খুঁড়ে বাগান তৈরি করতে। চাচা লাগাতেন সব রঙের ডালিয়া আর আম্মা লাগাতেন লেটুস, বেগুন, শিম, লাউ, লাল শাক, লাই শাক, টমাটো আরো কত কি। বিকেলে স্কুল থেকে এসে আমরা বাগানে পানি দিতে লেগে যেতাম। এসব শাক-সব্জি নিজেরা খেতাম , আত্মীয়- স্বজন, প্রতিবেশিদের ও দেয়া হত।

 

 

 

সন্ধ্যার আগে আব্বা আমাদের সাথে নিয়ে ঝরে পড়া শুকনো পাতা কুঁড়িয়ে জমা করে আগুন জ্বালাতেন। উঠানও পরিষ্কার হয়ে যেত, আগুনও পোহানো হতো। এখন লিখতে বসে সেই পুড়ানো পাতার গন্ধ যেন নাকে লাগছে। আহা! কি সুন্দরই না ছিল ছেলেবেলার সেই দিনগুলো ।

আব্বার বাগান করার শখের উত্তরাধিকার পেয়েছেন বড়আপা রওশন আর ছোটবোন সীমু। তাদের বাগান দেখার মতো। মেজ আপা রওনক আর দুলাভাইর ও বাগান করার বেশ শখ আছে।

ফুল-ফল শোভিত বাগান আর সবুজ প্রকৃতিকে আমি যেন “ taken for granted” হিসাবেই নিয়েছিলাম। প্রকৃতির মাঝে যে কি প্রশান্তি ছিল , তা বাড়ী ছেড়ে আসার পর আমি উপলব্দি করলাম। ২০১২ সালে নিউইয়র্ক এসে একটি বহুতল ভবনের একেবারে মাঝের একটা এপার্টমেন্ট এ উঠেছিলাম। নিউইয়র্ক শহর খুব জনবহুল হলেও এখানে সবুজের অভাব নেই। খুব পরিকল্পনা করে শহর টাকে বড় বড় গাছপালা আর ফুলে ফুলে সাজিয়ে রাখা হয়। বসন্ত আসলে শহরটার যেন অন্য রূপ চোখে পড়ে। কিন্তু আমাদের এপার্টমেন্ট থেকে তার কিছুই দেখার উপায় ছিলনা। ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে প্রকৃতি দেখতে না পারাটা আমাকে ভীষণ ভাবে ব্যথিত করত। প্রকৃতি যে আমার প্রতিদিনকার জীবনযাপনে এতোটাই অপরিহার্য আগে তা কখনো বুঝতে পারিনি।

 

 

 

যাহোক, আমার এই মানসিক কষ্টের অবসান হয়েছে। আজ যখন নিজের ঘরে বসে প্রকৃতির কোলে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত আর পূর্ণিমার রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করি, আনন্দে আর আল্লাহর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতায় চোখে জল আসে। কি অসম্ভব সুন্দর একটা পৃথিবী আল্লাহ আমাদের উপহার দিয়েছেন। আমরা প্রায়শই এর মূল্যায়ন করতে পারিনা। তাই আজ আমাদের অবহেলা আর অযত্নে এই পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
‘অমরাবতি’র মতো সংগঠন গুলো এই পৃথিবীকে আবার সবুজ শ্যামল করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। শেবুল চৌধুরী সহ অমরাবতীর সব সক্রিয় সদস্য রা এর জন্য বিশেষ ধন্যবাদের দাবীদার।
“A dream you dream alone is only a dream,
A dream you dream together is reality.”

 

 

 

অমরাবতির স্বপ্নদ্রষ্টা সেবুল চৌধুরী তার সপ্ন কে আজ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু মাত্র বৃক্ষরোপণ ই নয় , এই সংগঠন বিভিন্ন রকম কার্যক্রম এর মাধ্যমে পরিবেশ ও অসহায় মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও, আমার মতো প্রকৃতিকে যারা ভালবাসেন কিন্তু গাছপালা লাগানোয় তেমন আগ্রহ নেই তাদের কেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ফল-ফুল-শাক সবজি লাগাতে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। আমি আর আমার স্বামী ডাঃ ইউসুফ গজনবী প্রতিবারই গরমে দেশে চলে যাই, গাছপালা যা ই লাগাই পরিচর্যার অভাবে ঠিক মতো বেড়ে উঠতে পারে না। তবু শখের বশে এবার ও কিছু সবজি আর মৌসুমি ফুলের গাছ লাগিয়েছি। এবার আবহাওয়া বড় গোলমেলে, আজ গরম তো কাল আবার ঠাণ্ডা।। আমাদের একমাত্র লাউ গাছ টাকেও এখনো মাটিতে দিতে পারিনি। বাকি সব গাছ এখনো খুবই ছোট। কাজের শেষে ঘরে ফিরেই আমরা সবার প্রথম ওদের খোঁজ খবর নেই, পানি দেই। বীজ থেকে একটি গাছের বেড়ে ওঠা প্রত্যক্ষ করা ও এক অনির্বচনীয় অনুভুতি।
প্রকৃতির নিয়মে একদিন আমরা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। আমাদের স্বপ্নের “অমরাবতি” বেঁচে থাকবে এবং বেড়ে উঠবে, একদিন্ অমরাবতি অন্যতম একটি পরিবেশ বাদী সংগঠন হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ!

মুর্শিদা নাসরিন
নিউইয়র্ক